৭-৮ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হত শিক্ষকের চাকরি, যুক্ত ছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠরা, এসএসসি কাণ্ডের চার্জশিটে পরিষ্কার জানাল ইডি

এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রথম চার্জশিট পেশ করেছে ইডি। সেই চার্জশিটে স্পষ্ট জানানো হয়েছে যে তদন্তে চূড়ান্ত অসহযোগিতা করেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেই চার্জশিটে এও উল্লেখ করা হয়েছে যে কীভাবে শিক্ষকের চাকরি বিক্রি করা হত। ইডি উদাহরণ দিয়ে দেখায় যে ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকার বিনিময়ে শিক্ষকের চাকরি বিক্রি করেছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ শিক্ষা দফতরের উচ্চপদে থাকা আধিকারিক ও কর্মচারীরা।
যেমন শেফালি মণ্ডল নামের এক বিধবা মহিলা যিনি বল্লভপুর প্রাইমারি স্কুলের একজন শিক্ষিকা, তিনি ইডিকে জানিয়েছেন যে ২০১৭ সালে তিনি তাঁর পোস্টিং, বদলি ও বেতনের বিষয়ে একবার বিকাশ ভবনে এসে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অধীনস্থ এক কর্মচারীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। শিক্ষা দফতরের সেই কর্মী তাঁকে বলেছিলেন যে সেফালির দুই যমজ মেয়ের স্কুলে চাকরি করে দেবেন তিনি। আর এর জন্য তাঁকে ৮ লক্ষ টাকা দিতে হবে। ওই কর্মচারী এও জানান যে তিনি যে নাম সুপারিশ করেন, পার্থ নাকি তাদের চাকরি করে দেন। এই বলে ওই মহিলার থেকে টাকা নেন ওই কর্মচারী। কিন্তু শেফালি মণ্ডলের মেয়েদের চাকরি হয়নি।
এমন অনেক সাক্ষীর বয়ান নিয়ে তা চার্জশিটে উল্লেখ করেছে ইডি। যেমন সমর কুমার হালদার চাকরির জন্য এক মধ্যস্থতাকারী অবনী মণ্ডলকে ৭ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। অবনী আশ্বাস দেন যে ২০১৮ সালে প্যানেল তৈরি হলেই তিনি চাকরি পাবেন।
চার্জশিটে ইডি এটাই বোঝাতে চেয়েছে যে শিক্ষা দফতরে চাকরি দেওয়ার নাম করে সাধারণ মানুষকে কার্যত লুটেছে শিক্ষা দফতর। এই বিষয়ে ইডির নজর রয়েছে প্রাক্তন শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্যের দিকেই। চার্জশিটে সেই তথ্য দেখিয়েছে ইডি। মানিকের বিরুদ্ধে যে টাকা তোলার অভিযোগ ছিল, এমনটাও জানানো হয়েছে। আর সেই অভিযোগ তৃণমূলের এক নেতা করেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছেই।
পার্থ ও মানিকের যে ভালো বোঝাপড়া ছিল, তা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ থেকেই স্পষ্ট। এক তৃণমূল নেতা পার্থকে মেসেজ করে জানান, “দাদা মানিক ভট্টাচার্য ইজ টেকিং মানি যা তা ভাবে। কোভিডের সময়ে প্রাইভেট কলেজগুলো থেকে ছাত্রপিছু ও ৫০০ টাকা করে নিয়েছে। ছাত্ররা দিতে না পারলে কলেজকে ধমকি দিয়েছে তাদের হয়রান করছে। নদিয়ায় টেটের ইন্টারভিউ শেষ হয়েছে। কিন্তু ও চেয়ারম্যানকে বলেছে, ফাঁকা সাইন করা ডকুমেন্ট মাস্টার শিট জমা দিতে। ইন্টারভিউর কোনও নম্বর লিখতে মানা করছে। আবার ও টাকা নিয়ে করবে, আবার কেস হবে। আবার পার্টি খাস্তা হবে। প্লিজ এটা দেখুন। লাভ”।
এই বিষয়ে ইডির তরফে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেন নি তিনি। পার্থ বলেন যে এই ব্যাপারে প্রাইমারি বোর্ড বলতে পারবে। তাঁর এই বিষয়ে জানার কথা নয়।