‘দিদির রক্ষাকবচ’ কর্মসূচিতে গিয়ে আমজনতার ক্ষোভের মুখে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ, করজোড়ে ক্ষমা চাইলেন মমতার মন্ত্রী

গিয়েছিলেন তৃণমূলের নয়া কর্মসূচি ‘দিদির রক্ষাকবচ’ কর্মসূচির প্রচারে। কিন্তু সেখানে গিয়ে আমজনতার ক্ষোভের মুখে পড়লেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। গতকাল, বৃহস্পতিবার নদিয়ার চাকদহ ব্লকের ঘেঁটুগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের সহিসপুরে দলের কর্মসূচিতে যান মন্ত্রী। সেখানেই পুলিশের গাড়ির সামনেই তাঁর গাড়ি আটকে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখায় গ্রামবাসীরা। আবাস যোজনায় ঘর না পাওয়া বিধবা বা বার্ধক্য ভাতা না পাওয়া নিয়ে অভিযোগের পাশাপাশি গ্রামবাসীরা এও অভিযোগ করেন যে পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিক্ষোভকারী জনতাদের গালিগালাজ করেছেন।
এদিন সহিসপুরের রাস্তায় প্রায় ১৫ মিনিট মন্ত্রীর গাড়ি আটকে রাখেন গ্রামবাসীরা। নিজেদের দাবী-দাওয়া নিয়ে স্লোগান তুলতে থাকেন তারা। পরিস্থিতি ক্রমেই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে গাড়ি থেকে নামেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁকে ঘিরেই চলতে থাকে বিক্ষোভ। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাতজোড় করে ক্ষমা চান মন্ত্রী।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, এলাকার প্রায় ৬৫টি পরিবার আবাস প্লাস যোজনার ঘর পাওয়ার যোগ্য কিন্তু ঘর পাননি তারা। এমনকী, তাঁরা বার্ধক্য ভাতা এবং বিধবা ভাতাও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ জানান স্থানীয়রা। এর উপর মন্ত্রীর কনভয়ের একটি গাড়িতে থাকা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পরেশ ঘোষ বিক্ষোভকারীদের গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ।
এদিন গ্রামবাসীদের অভিযোগ শোনার পর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আপনাদের মধ্যে যাঁরা ঘর পাননি, তাঁরা একটি তালিকা তৈরি করে আমার কাছে পাঠিয়ে দেবেন”। তিনি এও আশ্বাস দেন যে যাঁরা বার্ধক্য এবং বিধবা ভাতা পাচ্ছেন না বা তা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে, তাদের জন্য গ্রামে একদিনের ক্যাম্প বসবে। ওই ক্যাম্পে বার্ধক্য ও বিধবা ভাতা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হবে বলে জানান মন্ত্রী।
এদিন মন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে কিছুটা শান্ত হন গ্রামবাসীরা। ৬৫টি পরিবারের নামের তালিকা মন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এদিন উপপ্রধানের অভব্য ব্যবহার নিয়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আমার দলের কোনও কর্মী, সে যে-ই হোক, যদি কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে থাকে, তার জন্য আমি ক্ষমা চাইতে রাজি আছি। কারণ, ক্ষমা চাওয়াটা মহৎ গুণের পরিচয়”।
মন্ত্রী আরও বলেন, “তিনি (উপপ্রধান) কেন এমন করলেন, তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হবে”। যদিও যার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, সেই ঘেঁটুগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পরেশ ঘোষ এই নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটেন।
বলে রাখি, এদিন রাজ্যের নানান প্রান্তেই ‘দিদি রক্ষাকবচ’ কর্মসূচি প্রচারে গিয়েছিলেন নানান তৃণমূল নেতা-নেত্রী। নবদ্বীপ বিধানসভার কৃষ্ণনগর ১ নম্বর ব্লকের ভালুকা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দিদির সুরক্ষা কবচের প্রচার করেন সাংসদ মহুয়া মৈত্র। রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভার নপাড়া-মুসুন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রচারে গিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা রঞ্জিত সরকার। শান্তিপুর বিধানসভার বাগআচড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রচার করেন বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামী। পলাশীপাড়া বিধানসভার মুরুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রচার চালান বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায়। নবদ্বীপ বিধানসভার চরমাঝদিয়া-চরব্রহ্মনগর এলাকায় প্রচারে গিয়েছিলেন বিধায়ক পূণ্ডরীকাক্ষ সাহা।