ঔদ্ধত্য! ক্লাসে ছাত্রকে শাসন করার জের, টিচার্স রুমে ঢুকে শিক্ষককে বেধড়ক মারধর ছাত্রের অভিভাবক ও এলাকার দলবলের

ক্লাসে মন দিয়ে পড়া শুনছিল না ছাত্র। শিক্ষক শাসন করেছিলেন ওই ছাত্রকে। কান ধরে ওঠবস করতে বলেছিলেন। কিন্তু এর জন্য যে তাঁকে মার খেতে হবে, তা হয়ত স্বপ্নেও কল্পনা করেন নি ওই শিক্ষক। ছাত্রকে শাসন করার জেরে ছাত্রের দলবল এসে বেধড়ক মারধর করল শিক্ষককে।
কী ঘটেছে ঘটনাটি?
এই ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার শ্যামপুর নাওদা নয়নচন্দ্র বিদ্যাপীঠে। জানা গিয়েছে, ওই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক প্রসেনজিৎ বিশ্বাস দশম শ্রেণীর ক্লাস নিচ্ছিলেন। এক ছাত্র অমনোযোগী ছিল ক্লাসে। ফলে তাকে বকাঝকা করেন তিনি। কান ধরে ওঠবস করতেও বলেন। এরপরই ছেলেটি তার মামাবাড়িতে জানায় যে তার কান থেকে নাকি রক্ত পড়ছে। এই খবর পেয়েই মামাবাড়ির লোকজন ও আরও এলাকায় কিছু লোকজন টিফিন টাইমে আসে স্কুলে। টিচার্স রুমে সোজা ঢুকে গিয়ে চড়, কিল, ঘুষি মারতে থাকেন ওই ইংরেজি শিক্ষককে।
কী জানাচ্ছে ছাত্রের সহপাঠীরা?
সহপাঠীদের কথায়, “গ্রামারের ক্লাস নিচ্ছিলেন স্যর। বেশ কয়েকটা প্রশ্ন-উত্তর লেখান। কিন্তু ওই ছেলেটা ২টো মাত্র লিখেছিল। এরপরই স্যর ওকে কান ধরে ওঠবস করতে বলেন। কিন্তু ও স্যরের কথা শুনছিল না। এরপর স্যর ওর কানটা ধরে টানে। ও যদি প্রথমে ওঠবস করত, তাহলে কিন্তু স্যর মারতেন না। আমাদের সামনেই সবটা হয়েছে। একেবারেই ওর কান থেকে রক্ত বেরোয়নি। স্যরকে খারাপভাবে মারল। একেবারে মিথ্যা কথা বলে মারা হল স্যরকে”।
ছাত্রের বাড়ির লোকের এমন সাহস কীভাবে হয় যে স্কুলের মধ্যে ঢুকে এভাবে একজন শিক্ষককে মারধর করছে, এই নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। রাজনৈতিক স্নেহছায়া নাকি ঔদ্ধত্য? সমাজ গড়ার কারিগরদের গায়ে কীভাবে হাত তুললেন অভিভাবকরা? এই ঘটনায় আতঙ্কিত বাকি শিক্ষকরা। এই ঘটনায় শ্যামপুর থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে ২ অভিভাবককে। আরও ২ জন পলাতক।
কী জানান প্রহৃত শিক্ষক?
প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের কথায়, “আমি শুনলাম ছেলেটি মামারবাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে। হয় ওর মামা বা ওর মামার ছেলে মিলে চারজন এসেছিল। একজনই ভয়ঙ্করভাবে মারধর করতে থাকে। ওকে কেউ আটকাতে পারছিল না। শুধু আমাকে না, আরও চারজন শিক্ষক, একজন শিক্ষিকার গায়েও হাত তুলতে গিয়েছিল”।
ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরুণাভ বাজানির কথায়, তিনি ২২ বছর ধরে এই স্কুলে পড়াচ্ছেন কিন্তু এমন ঘটনা কখনও ঘটে নি। তিনি বলেন, “বাইরে থেকে কেউ টিফিন পিরিয়ডে স্টাফ রুমে ঢুকে পড়বেন, এমনভাবে মারধর করবেন, আমাদের ভাবনাতেও ছিল না। আমাদের দেড় হাজারের উপর ছাত্রছাত্রী আছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা আছেন। কখনও এমন হয়নি”।