এ যেন উলাটপুরাণ! খড়ের চাল, বাঁশের বেড়ার ভগ্নপ্রায় ঘর, তাও আবাস যোজনার বাড়িতে ‘না’ তৃণমূল উপপ্রধানের

আবাস যোজনা নিয়ে রাজ্যে একাধিক দুর্নীতির ঘটনা সামনে এসেছে। যাদের মাটির বাড়ি, নিজস্ব বাড়ি নেই তারাই আবাস যোজনায় বাড়ি পাচ্ছেন না অথচ অযোগ্যদের নাম উঠছে তালিকায়। অনেক তৃণমূল নেতা ও তাদের ঘনিষ্ঠদের নাম উঠেছে আবাস যোজনার তালিকায়, এমনটাই অভিযোগ। তবে এবার ঘটল উল্টো ঘটনা। ভগ্নপ্রায় বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবাস যোজনার বাড়ি ফেরালেন তৃণমূলেরই নেত্রী।
খড়ের চাল দেওয়ার বাঁশের বেড়ার একচিলতে ঘর। সেখানেই স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার কাটোয়ার শিঙ্গি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রাখি ধাড়ার। এখনও পর্যন্ত আবাস যোজনায় ঘর পায়নি তাঁর পরিবার। তালিকায় নামও নেই। কিন্তু তা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই রাখিদেবীর। তিনি চানও না বাড়ি। বরং এলাকায় ঘুরে ঘুরে যারা অযোগ্য তারা ঘর পাচ্ছেন কী না, সেসবের খবর রাখছেন নিয়মিত।
রাখিদেবীর কথায়, “আমার এলাকায় এমন কয়েকটি পরিবার রয়েছে, যাদের অবস্থা আমাদের মতোই বা আমাদের থেকেও খারাপ। আমি চাই, তারা যেন আগে ঘরের অনুদান পায়। তাছাড়া যতদিন উপপ্রধান রয়েছি ততদিন নিজেদের পরিবারের জন্য আবাস প্রকল্পে আবেদন করতেও চাই না। পরে দেখা যাবে”।
উপপ্রধান রাখি ধাড়ার স্বামী হলেন মিলন ধাড়া। তিনি পেশায় জনমজুর। রাখিদেবীর এক ছেলে পড়ে নবম শ্রেণীতে ও এক মেয়ে পড়ে তৃতীয় শ্রেণীতে। রাখিদেবীর স্বামীর কথায়,“আমার স্ত্রী উপপ্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর পঞ্চায়েতের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। মূলত আমার রোজগারেই সংসার চলে। খাওয়া-পরা সামলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালানো কষ্টের হয়ে পড়ে। তাই ঘরবাড়ি কিছু করতে পারিনি”।
এই বিষয়ে মালঞ্চ গ্রামের তৃণমূলের ৫ নম্বর বুথ সভাপতি গৌতম রায় বলেন, “উপপ্রধান বাড়িতে রান্নার কাজ সেরে এলাকায় এলাকায় ঘোরেন। পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় প্রতিটি সংসদে ঘুরে সাধারণ মানুষের খোঁজখবর রাখেন। কেউ পঞ্চায়েতের সার্টিফিকেট, কেউ বিভিন্ন প্রকল্প বা আবাস যোজনার জন্য অনুরোধ করেন। উপপ্রধান তাঁদের যথাযথ সহায়তা করেন। কিন্তু নিজের পরিবারের জন্য আবাসের আবেদন করেননি”।
উপপ্রধান রাখি ধাড়া বলেন, “অভাব আছে ঠিকই, কিন্তু যখন সাধারণ মানুষের সেবার জন্য দায়িত্ব নিয়েছি, ততদিন নিজেদের সুবিধা-অসুবিধাকে বেশি গুরুত্ব দিলে চলবে না। মানুষের পাশে থাকতে চাই”।