রাজ্য

পড়াশোনার জন্য গিয়েছে মায়ের কানের দুলও, সমস্ত আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে WBCS পরীক্ষায় ইতিহাস গড়ল পরিযায়ী শ্রমিকের ছেলে

মেধা আর পরিশ্রম থাকলে যে কোনও প্রতিকূলতাকে যে জয় করা সম্ভব, তা আরও একবার প্রমাণ করলেন মালদহের কেশব দাস। ছোটো থেকে অভাব কেশবের নিত্যসঙ্গী। অর্থের অভাবে দু’বেলা খাবারও জুটত না ঠিকমতো। তবে সেই পরিযায়ী শ্রমিকের ছেলে এবার WBCS পরীক্ষায় এমন ফল করল যা চমকে দেওয়ার মতো।

মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের দৌলতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হরদমনগর গ্রামের বাসিন্দা কেশব দাস। তাঁর WBCS পরীক্ষার ফলাফল জানাজানি হতেই বাড়িতে আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর আনাগোনা। ফুল, মিষ্টি সহযোগে আসছে শুভেচ্ছা বার্তা। ছেলের এমন সাফল্যে দারুণ খুশি কেশবের মা-বাবা।

২০২০ সালে দ্বিতীয়বার ডবলু বি সি এস পরীক্ষা দেব কেশব। চলতি মাসের ২ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা গেল, WBCS এক্সিকিউটিভ ‘A’ বিভাগে সারা পশ্চিমবঙ্গে ২৭ স্থান অধিকার করেছেন তিনি। দু’বেলা ঠিকভাবে খাবার না জুটলেও মেধার অভাব কোনওদিন ছিল না কেশবের।

জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে হরদমনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৫৭ শতাংশ নাম্বার পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেন কেশব। ২০১৩ সালে দৌলতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৭৬ শতাংশ নাম্বার পেয়ে পাশ করেন। উচ্চমাধ্যমিক। এরপর সংস্কৃত অনার্স নিয়ে ভর্তি হন মালদা কলেজে। ২০১৬ সালে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে স্নাতক পাশ করেন। ২০১৮ সালেই গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭৭ শতাংশ নাম্বার পেয়ে মাস্টার ডিগ্রি শেষ করেন কেশব।

মালদার হোস্টেলে থেকেই পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেন তিনি। অর্থের অভাবে কোচিং নেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। নিজে টিউশন পড়িয়ে পড়াশোনার খরচ চালাতেন কেশব। ছোটো থেকেই ইচ্ছা ছিল শিক্ষক হওয়ার। তাঁর মেধা ও কঠোর পরিশ্রম অবশেষে তাঁকে সেই সুযোগ এনে দিয়েছে।

দুই দাদা ও এক দিদি রয়েছে কেশবের। তাঁর বাবা জ্ঞানবান দাস পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক। লকডাউনে কাজ হারান তিনি। সেই সময় দিনমজুরের কাজ ধরেন জ্ঞানবানবাবু। তবে সেই রোজগারে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। শত কষ্ট সত্ত্বেও ছেলের পড়াশোনা নিয়ে কখনও আপোস করেন নি জ্ঞানবানবাবু।

ছেলের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য ব্যাঙ্ক থেকে নিয়েছেন কৃষি ঋণ। স্ত্রীর শেষ সম্বল কানের দুল পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে। তবে এখন আর তা নিয়ে কোনও আপসোস নেই তাঁর। ছেলে যে তাঁর মুখরক্ষা করেছে। কিন্তু তবুও কোথাও গিয়ে যেন একটা অপরাধবোধ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে জ্ঞানবানবাবুকে।

তিনি জানান, দৌলতপুরের উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যেতে একটি সাইকেলের আবদার করেছিল ছেলে। কিন্তু তা কিনে দিতে পারেননি তিনি অর্থের অভাবে। প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটেই যাতায়াত করত কেশব। পড়াশোনার সুবিধার জন্য ল্যাপটপের প্রয়োজন হলে তাও কিনে দেওয়ার সামর্থ্য হয়নি জ্ঞানবানবাবুর। তবে এবার তাঁর কষ্টের দিন শেষ। সমস্ত প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে সাফল্যের আলো দেখেছে তাঁর  ছোটো ছেলে।

Back to top button
%d bloggers like this: