লাইফ স্টাইল

ঋণের দায়ে পথে বসেছিলেন, ফুটপাত থেকে ব্যবসা শুরু করে আজ বিখ্যাত বিরিয়ানির ব্র্যান্ড, জেনে নিন ‘ডি বাপি বিরিয়ানি’র অজানা ইতিহাস

ব্যারাকপুরে মানেই যেন প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিরিয়ানির প্লেট। হ্যাঁ, দাদা-বৌদির বিরিয়ানি তো আছেই, কিন্তু বিগত কয়েক বছরে যে বিরিয়ানি মানুষের মন খুবই জয় করে নিয়েছে, তা হল ‘ডি বাপি বিরিয়ানি’। দিনদিন এই দোকানের বিরিয়ানির নাম ক্রমেই বাড়ছে। এখন এই ‘ডি বাপি বিরিয়ানি’ নিজেই একটা ব্র্যান্ড।

প্লেটের মধ্যে আধা হলুদ, আধা সাদা মশলা মাখানো লম্বা চালের ভাত, পাশে রাখা একটা আলুর টুকরো ও এক পিস চিকেন বা মাটন। সেই তুলতুলে মাংস আলু সহযোগে মশলাদার রাইসের সঙ্গে মিশিয়ে মুখে পুরে দেওয়ার মধ্যে যে স্বর্গীয় সুখ রয়েছে, তা কেবল বিরিয়ানি লাভাররাই বুঝবেন। এখন কলকাতা ও কলকাতা সংলগ্ন মানুষের কাছে ডি বাপি বিরিয়ানির নাম মুখে মুখে ঘুরছে।

ব্যারাকপুর গেলে বিরিয়ানির ক্রেভিং উঠলে একবার তো ঢুঁ মারতেই হবে ডি বাপি-তে। প্রতিদিন হাঁড়ি হাঁড়ি বিরিয়ানি নিমেষে শেষ হয়ে যাচ্ছে। দোকানে একের পর এক গ্রাহকের ভিড়। অনেক সময় তো দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষাও করতে হয়ে বিরিয়ানির আশায়। কিন্তু আজকের এই সফল ব্যবসার নেপথ্যে যে দুঃখজনক কাহিনী রয়েছে তা হয়ত অনেকেরই অজানা। কীভাবে শুরু হল ডি বাপি বিরিয়ানি? শুরুতেই কী সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছিলেন দোকানের মালিক? জেনে নিন ‘ডি বাপি বিরিয়ানি’র অজানা ইতিহাস।

প্রথমেই বলে রাখি এই ‘ডি বাপি বিরিয়ানি’র ‘ডি’ হলেন দোকানের মালিকের স্ত্রী ডলি। স্ত্রীয়ের নামের প্রথমাক্ষর ও নিজের নাম বাপি, এই দুই মিলিয়ে নিজের ব্যবসার নামকরণ করেন বাপিবাবু। ২০০৬ সালের ১৫ই আগস্ট শুরু হয় ‘ডি বাপি বিরিয়ানি’র যাত্রাপথ। তখন অবশ্য স্থায়ী দোকান কিছু ছিল। ফুটপাতের উপর একটি হাঁড়ি নিয়েই চলত বিরিয়ানি বিক্রি।

ফুটপাতে বিরিরানি বিক্রি করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীনও হয়েছেন বাপিবাবু। পুলিশের খোঁচা থেকে শুরু করে সরকারি জায়গায় অবৈধ দোকান চালানোর জেরে ভাঙচুর, সবই সহ্য করেছেন বাপিবাবু। কিন্তু হাল ছাড়েন নি। বা বলা ভালো, তাঁকে হাল ছাড়তে দেন নি তাঁর স্ত্রী। তাঁর স্ত্রীয়ের মনের জোরেই চালিয়ে যান ব্যবসা। তাঁর স্ত্রীও ফুটপাতে হাঁড়ি নিয়ে বসে বিরিয়ানি বিক্রি করেছেন বলে জানান বাপিবাবু।

কষ্টের এখানেই শেষ নয়। জমি-বাড়ি বন্ধক দিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে লোণ নিয়ে শুরু করেছিলেন ব্যবসা। কিন্তু ব্যাঙ্কের কিস্তি না মেটাতে পারায় কার্যত দেউলিয়া হয়ে রাস্তায় বসেন বাপিবাবু ও তাঁর স্ত্রী। কিন্তু ওই যে, মনের জোর। যে ব্যবসা শুরু করেছেন, সেখান থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই দাঁড়ায় না। ফের ধীরে ধীরে নিজেদের তৈরি করেন দম্পতি।

এইভাবেই কষ্টের মধ্যে চলতে চলতে ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান থেকে স্থায়ী দোকান পায় ‘ডি বাপি বিরিয়ানি’। তারপরে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি বাপিবাবু বা তাঁর স্ত্রীকে। কারণ এরপরের ইতিহাস আশা করি সকলেরই কমবেশি জানা। সেই ফুটপাত থেকে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, আজও কালের নিয়মে দুর্বার গতিতে চলছে সেই যাত্রা। বলতে গেলে রমরমিয়ে।

নিজের ব্যবসার সাফল্যের পুরো কৃতিত্বই নিজের স্ত্রীকে দেন বাপিবাবু। ওই যে কথায় আছে না, ‘প্রত্যেক সফল পুরুষের পিছনে একজন নারীর হাত থাকে’। বাপিবাবুর জীবনে তাঁর স্ত্রী সেরকমই। কষ্টের সময়ে যদি তিনি তাঁর স্বামীর পাশে ঢাল হয়ে না দাঁড়াতেন, তাহলে হয়ত আজকের এই ‘ডি বাপি বিরিয়ানি’ অনেক আগেই ধুলোয় মিশে যেত। সেই দুঃখকষ্টের দিনগুলো একসঙ্গে পেরিয়ে এসেছিলেন বলেই আজ এতটা সাফল্য পেয়েছেন তারা।

দিনের পর দিন ধরে এভাবেই যেন মানুষের মুখে বিরিয়ানি তুলে হাসি ফোটাতে পারেন এই দম্পতি। তাহলে আর দেরি কীসের, আজ তো রবিবার। ছুটির দিনে একবার ঢুঁ মারবেন নাকি ব্যারাকপুরের এই দোকানটিতে?

Back to top button
%d bloggers like this: