কলকাতা

হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ মা, সংসারের ঘানি নিজের কাঁধে তুলে ফুটপাতে ভাতের দোকান চালাচ্ছে মেয়ে, সকলের বাহবা কলকাতার তনয়াকে

আজকালকার দিনে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে কত ভিডিও, কত ছবিই আমাদের সামনে আসে। কিছু ভিডিও যেমন আমাদের নিখাদ আনন্দ দেয়, তেমনই আবার কিছু ভিডিও আমাদের বেশ উৎসাহিতও করে তোলে। কিছু কিছু ভিডিওর মাধ্যমে আমরা কত মানুষের দৈনন্দিন কষ্টের কথা জানতে পারি।

একজন সন্তানের জীবনে মা-বাবার থেকে বড় বা গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু হতে পারে না। মা-বাবা নানান দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে আমাদের বড় করেন, জীবনের পথে এগিয়ে যেতে তারাই আমাদের সবথেকে বড় ভরসার জায়গা। তাহলে মা-বাবার কোনও স্মসায়বা দুর্দিনে তাদের পাশে থাকা, তাদের অবলম্বন হয়ে ওঠা আমাদের কর্তব্য।

অনেকেই বলেন বর্তমান প্রজন্ম নাকি মা-বাবার বয়সকালে তাদের দেখে না। তাদের প্রতি কোনও দায়িত্ব পালন করে না। হ্যাঁ, এখন এমন নিদর্শন আমাদের চোখের সামনে অনেক রয়েছে যে বয়স্ক মা-বাবাকে বাড়ি থেকে কেউ বের করে দিয়েছে বা তাদের অত্যাচার করছে। কিন্তু ব্যতিক্রম তো সব জায়গায় থাকে। মা-বাবার পাশে দাঁড়াতেও যে একজন সন্তান প্রতিনিয়ত কষ্ট করে যায়, নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে হলেও যে একজন সন্তান তা হাসিমুখে মেনে নেয়, এমন নিদর্শনও কিছু কম নয়। এমনই এক উদাহরণ হলেন কলকাতারই এক তনয়া।

মা অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি। মায়ের চিকিৎসার টাকা ও সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে উঠছিলেন বাবা। সেই কারণে বাবার ভাতের হোটেলের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে রমরমিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন মেয়ে। কলকাতার বুকে প্রতিদিন অগুনতি মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন এই কন্যা। চালাচ্ছেন ‘আনলিমিটেড ভাতের থালির হোটেল’।

কলকাতার পুরনো কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ের পাশে জিপিও ও স্ট্র্যান্ড রোডের মাঝে ফুটপাতের উপরেই দেখা মিলবে এই ভাতের হোটেলের। হোটেল বলতে ফুটপাতের উপরেই খাবারের জিনিসপত্র, চেয়ার-টেবিল পেতে যেমন হয় আর কী! পাকাপোক্ত কোনও দোকান সেভাবে নেই। তবে সুন্দর সাজানো-গোছানো দোকান না থাকলে কী হবে, তাঁর সেই দোকানে সারাক্ষণই ভিড়। বিশেষ করে দুপুরের খাবারের সময় তো লাইন লেগে যায় রীতিমতো।

একা হাতেই পরিবেশন করছেন সকলকে। খাবার বেড়ে সকলকে দেওয়া আর গ্রাহকদের সঙ্গে মিষ্টি ভাষায় কথা বলা, এখানেই তাঁর দোকানের বিক্রির প্রধান ইউএসপি। সেই কন্যার নাম জানা না গেলেও, তাঁর কথায়, সে যদি সম্মানের সঙ্গে সৎ পথে থেকে কোনও কাজ করে, তাহলে কারোর কোনও সমস্যা কেন থাকবে।

এই ভাতের দোকানে বিক্রি হয় আনলিমিটেড ভাতের থালি। অর্থাৎ ভাত, ডাল বা অন্যান্য তরিতরকারি আপনার যতবার খুশি ততবার নিতে পারবেন আমিষ কোনও আইটেম বাদ দিয়ে। মাছ, ডিম সবই থাকে প্রতিদিনের মেনুতে। সংসার চালাতে এইভাবে নিজের কাঁধে সমস্ত দায়িত্ব তুলে নেওয়া কন্যাকে বাহবা জানিয়েছেন নেটিজেনরা। সকলেই অনেক আশীর্বাদ করেছেন তাঁকে। এভাবেই হাসিমুখে যেন সে আরও সাফল্য পায় জীবনে, এমন কামনাই করেছেন সকলে।

Back to top button
%d bloggers like this: