মমতাকে না জানিয়েই বড় সিদ্ধান্ত ফিরহাদের, পুরমন্ত্রীর উপর বেজায় চটলেন কুণাল, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবী

কিছুদিন আগেই ঘোষণা করা হয় যে কলকাতার পার্কিং ফি (parking fee) বৃদ্ধি হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে নাকি কিছুই জানেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁকে না জানিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। আর এই বিষয় নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ মমতা। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই জানালেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)।
কিছুদিন আগেই ফিরহাদ হাকিম কলকাতায় পার্কিং ফি বৃদ্ধির কথা জানান। আগে দু’চাকা গাড়ি জন্য এক ঘণ্টার পার্কিং ফি ছিল ৫ টাকা তবে নতুন পার্কিং ফি অন্যুজায়ি তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ টাকায়। চার চাকা গাড়ির জন্য এতদিন ঘণ্টা পিছু পার্কিং ফি দিতে হত ১০ টাকা। কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী তা হয়ে যায় ২০ টাকা। একইভাবে বাস ও লরির ক্ষেত্রেও এবার থেকে ঘণ্টা পিছু পার্কিং ফি ২০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ টাকায়। দু’চাকা গাড়ি পার্কিং লটে ৩ ঘণ্টা থাকলেই দিতে হবে ৪০ টাকা। ৪ ঘণ্টার জন্য ৬০ টাকা এবং ৫ ঘণ্টার জন্য ৮০ টাকা দিতে হবে। দু’চাকা গাড়ি রাখার সময়সীমা ৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেই ঘণ্টা পিছু ৫০ টাকা গুনতে হবে।
আবার চারচাকা গাড়ির ক্ষেত্রে ২ ঘণ্টার জন্য ৪০, ৩ ঘণ্টার জন্য ৮০ এবং ৪ ঘণ্টার জন্য ১২০ ও ৫ ঘণ্টার জন্য ১৬০ টাকা গুনতে হবে। চারচাকা গাড়ির ক্ষেত্রেও ৫ ঘণ্টার বেশি সময় সময় পেরিয়ে গেল ঘণ্টা পিছু দিতে হবে ১০০ টাকা। অন্যদিকে, ৪ ঘণ্টা বাস বা লরি রাখার জন্য নেওয়া হবে ২৪০ টাকা করে। আর ৫ ঘণ্টা পার হলেই ঘণ্টা পিছু দিতে হবে ২০০ টাকা।
এই পার্কিং ফি বৃদ্ধি নিয়ে কুণাল ঘোষ জানান যে ফিরহাদ হাকিম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে না জানিয়েই এই পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পার্কিং ফি বৃদ্ধি নিয়ে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন বলেও জানান। এরপরই এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন মমতা।
কুণালের কথায়, “পার্কিং ফি বৃদ্ধি নিয়ে ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কথা বলেন। তারপরই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে নির্দেশ দেন মমতা। কুণাল বলেন, “আমাদের নেতৃত্বের নজরে এসেছে। পুরসভা এলাকায় পার্কিংয়ের খরচ অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। সাধারণ মানুষকে অনেকটা টাকা বাড়তি দিতে হচ্ছে। এই সরকারের উদ্দেশ্য যাতে সাধারণ মানুষের উপর চাপ না পড়ে। ২০১১ থেকে এমন কাজ করেননি তিনি যাতে চাপ তৈরি হয়। তবে এই সিদ্ধান্তে মানুষ বিস্মিত। বিষয়টা নিয়ে কথা বলেন অভিষেক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট সিদ্ধান্ত তাঁর অনুমোদন সাপেক্ষে এটা হয়নি। যে স্তরেই হোক সরকার বা দল এটা অনুমোদন করে না। তিনি চান না কোনও চাপ পড়ুক। তিনি মেয়রকে জানিয়ে দিয়েছেন যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা প্রত্যাহার করা হোক”।
কুণালের এহেন মন্তব্যের পর এই নিয়ে মুখ খোলেন ফিরহাদ হাকিমও। তিনি বলেন, “আমি বিষয়টিতে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। আমাকে মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে কোনও বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেননি। তাহলে আমি কেন প্রত্যাহার করব? এটা আমার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাপার। অন্য কেউ কেন সাংবাদিকদের সামনে বিষয়টিকে নিয়ে আসবেন? এটা আমাদের প্রশাসনের ব্যাপার প্রশাসনিক ভাবে বুঝে নেব”।
ফিরহাদের কথায়, “সংবাদমাধ্যমে এভাবে বলা ঠিক হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে নির্দেশ এলে প্রত্যাহার করে নেব”। এরপরই কলকাতা পুরসভার তরফে কিছুক্ষণের মধ্যে পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়। এই নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানায় তৃণমূল।