রাজ্য

মনের ইচ্ছাই আসল! ছোট্টবেলাতেই স্কুলছুট, ছেলের সঙ্গে মাধ্যমিক দিয়ে পাশ করলেন মা, এমএ পাশ মেয়েই অনুপ্রেরণা, জানালেন আয়েশা

একসময় চাপে পড়ে পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। এবার প্রায় ২৫ বছর পর এমএ পাশ মেয়ের জেদ ও অনুপ্রেরণার জেরে মাধ্যমিক দিয়েছিলেন আয়েশা বেগম। গত শুক্রবার ফলাফল বেরোনোর পর দেখা যায় ৩৮৫ নম্বর নিয়ে পাশ করেছেন স্কুলছুট আয়েশা। শুধু তাই-ই নয়, মায়ের সঙ্গে এবার পরীক্ষা দিয়েছিলেন শেখ পারভেজ আলমও। তিনিও ৪৬২ নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন তিনি।

পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় থানার ঘাটশিলা গ্রামের বাসিন্দা আয়েশা বেগম। তাঁর স্বামী শেখ সাইফুল আলম চাষবাস করেন। আইসিডিএসে সহায়িকার কাজ করেন আয়েশা। অভাবের সংসারে দুই সন্তানের লেখাপড়া চালানো সম্ভব ছিল না। সেই কারণে বোন ফিরদৌসির পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ছ’বছর আগে লেখাপড়ায় ছেড়ে দেন পারভেজ।

ফিরদৌসির মনে এই নিয়ে আক্ষেপ কম ছিল না। সেই কারণে নিজের লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে মা ও দাদাকেও পড়াশোনার চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দিতেন তিনি। পরে মা আয়েশা ও দাদা পারভেজকে ঘাটশিলা সিদ্দিকীয়া সিনিয়ার হাই মাদ্রাসায় ভর্তি করেন ফিরদৌসি।

সেখান থেকেই এই বছর একসঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন মা ও ছেলে। আর দাদা ও মায়ের এমন ফলাফলে খুবই খুশি ফিরদৌসি। ছেলে ও স্ত্রীয়ের এমন সাফল্যে গর্বিত আলমও।

আয়েশা বেগম জানান, তাঁর ছোটবেলা খুব দুঃখের মধ্যে কেটেছে। বাবাকে কাছে পান নি তিনি। মামার বাড়িতে অনেক কষ্টে মানুষ। ক্লাস এইটে ওঠার পরই বন্ধ হয়ে যায় তাঁর পড়াশোনা। বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। তারপর থেকেই সংসারের ঘানি টানতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ছেলে ও মেয়েকে বড় করেন। ২০১০ সালে বর্ধমানের একটি আইসিডিএস কেন্দ্রে কাজ শুরু করে আয়েশা।

তিনি জানান, সংসার ও বাইরের কাজ সামলেও যে তিনি পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছেন, তা তাঁর মেয়ের জন্যই সম্ভব হয়েছে। সমস্ত বাধা ও প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে অবশেষে মাধ্যমিক দিতে পেরেছেন তিনি। উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ারও ইচ্ছে রয়েছে তাঁর, এমনটাই জানান আয়েশা।

মায়ের মতোই মাধ্যমিক দিয়ে পাশ করতে পেরে খুবই উচ্ছ্বসিত পারভেজও। তিনি জানান, “বোন ও বাবার অনুপ্রেরণাতেই আবার লেখাপড়া জীবনে ফিরে পেয়ে তিনি খুশি। আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। অনটনই নিত্যদিনের সঙ্গী। এই অবস্থায় শুধুই মনে হত কোনও কাজে যোগ দিয়ে আমাকে উপার্জন করতে হবে। নয়তো আমাদের সংসারটা ভেসে যাবে। এখন পাস করে পেরে খুব ভাল লাগছে। উচ্চমাধ্যমিকও দেব”।

Back to top button
%d bloggers like this: