ধিক্কার কর্পোরেট জগত! বিনা নোটিশেই চাকরি থেকে ছাঁটাই, মানসিক অবসাদের জেরে আ’ত্ম’হ’ত্যার পথই বাছলেন Nivea কোম্পানির কর্মী

কিছুদিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল একটি ভিডিও। ভিডিও-র বিষয়বস্তু HDFC ব্যাঙ্কের ঊর্ধ্বতন এক কর্তা কীভাবে নিজের কর্মচারীদের ভিডিও কলের মাধ্যমে হেনস্থা করছেন। তাদের দোষ, টার্গেট পূরণ না হওয়া। আর সেই কারণে গালিগালি দেওয়া থেকে অশ্রাব্য কথা কিছুই বাদ রাখেন নি সেই কর্তা পুষ্পল রায়। কর্পোরেট জগতের অন্দরমহল যে কতটা নোংরা আর কতটা চাপ ও হেনস্থা সহ্য করতে হয় কর্মীদের, এই ভিডিও ছিল তার জলজ্যান্ত উদাহরণ।
এটা তো ছিল মাত্র একটা ভিডিও। কিন্তু এমন ঘটনা কর্পোরেট জগতে নিত্যদিন ঘটে চলেছে। এই চাও, হেনস্থা সহ্য করে যেসমস্ত কর্মীরা কাজ চালিয়ে যেতে পারেন, তারাই টিকে যান, কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্ত হতে হয় আর এমন মানসিক চাপের জেরে কেউ আবার নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার পথ বেছে নেন। যেমনটা করেছিলেন Nivea কোম্পানিতে চাকরি করা সৌম্যজিৎ গিরি।
সম্প্রতি সৌম্যজিৎ গিরির স্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট শেয়ার করেন। তাঁর স্বামীকে কীভাবে এই কর্পোরেট জগতের হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল আর এর জেরে তিনি যে চূড়ান্ত এক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সে বিষয়ে জানান ওই ব্যক্তির স্ত্রী সীমা গিরি। পোস্টে তিনি জানান, তাঁর স্বামীর নিজের চাকরি নিয়ে কোনও অভিযোগ ছিল না। সেলসের দিক থেকে অন্যান্য রিজিয়নের থেকে এগিয়েই ছিল তাঁর স্বামীর কোম্পানি। কিন্তু আচমকাই কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তাঁর স্বামী মুম্বইয়ের অফিসে ডেকে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় তাও আবার বিনা কোনও নোটিশেই। সেই বিষয় সহ্য করতে পারেননি সৌম্যজিৎ। ফলত, গলায় ফাঁস দিয়ে আ’ত্ম’ঘা’তী হন তিনি।
তাঁর স্ত্রী জানিয়েছেন, তাদের তরফে মামলা করা হয় Nivea কোম্পানির বিরুদ্ধে যে কেন কোনও নোটিশ ছাড়াই সৌম্যজিৎকে এভাবে বরখাস্ত করা হল। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। সীমার অভিযোগ, পুলিশ সেভাবে কোনও তথ্য সংগ্রহই করে নি। হয়ত কোনও ‘অদৃশ্য শক্তির’ হাট ছিল তাতে। এমনকি, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল, তারাও কোনও এক অজ্ঞাত কারণেই জামিন পেয়ে যায়।
সীমা এও জানান যে পুলিশ জোর করে সেই মামলা ধামাচাপা দেওয়ার কাজে লেগে পড়ে। আর শেষ পর্যন্ত তাঁর স্বামীর সুবিচার পাওয়া আর হয় না। এই নিয়ে Nivea কোম্পানিকে ধিক্কার জানিয়েছেন সীমা। তাঁর কথায়, তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়ত ওই কোম্পানির জন্য নিছকই এক ছেঁটে ফেলা কর্মী আ’ত্ম’হ’ত্যা। কিন্তু এর জেরে যে কত পরিবার প্রতিনিয়ত শেষ হয়ে যাচ্ছে, ভেঙে পড়ছে, তার জবাব কে দেবে?
সীমার কথায়, পুষ্পল রায়ের মতো এক-দুজনকে ছাঁটাই করলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। কর্পোরেট জগতে এমন চলতেই থাকে প্রতিনিয়ত। এই রীতি মূল থেকে উপড়াতে হলে কোম্পানিগুলোকেই বয়কট করতে হবে। তিনি এমনভাবেই নিজের লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে জানান।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সত্যিই কী এমন সব কোম্পানিকে একেবারে বয়কট করা সম্ভব? আমরা তো সকলেই এসবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছি। এর থেকে মুক্তি মেলা আদেও সম্ভব নয়। তাহলে সৌম্যজিতের মতো কর্মীদের কী এমনই ভবিষ্যৎ? এভাবেই কর্পোরেট জগতের নিচে চাপা পড়ে দগ্ধে দগ্ধে একদিন শেষ হয়ে যেতে হবে তাদের? এর সত্যিই কোনও উত্তর নেই।