দেশ

খয়রাতি করে ঋণের বোঝা বাড়াতে থাকলে শ্রীলঙ্কার মতোই হাল হবে, পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্যকে সতর্ক করলেন বিদেশমন্ত্রী

অতিরিক্ত ঋণের জালে জড়িয়ে অর্থনীতিকে তলানিতে ঠেকিয়ে দেশের যে কী অবস্থা হতে পারে, তার উদাহরণ শ্রীলঙ্কা। প্রতিবেশি এই দ্বীপরাষ্ট্রের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই খয়রাতি কম ও যথেচ্ছ ঋণ নেওয়ার বিষয়ে একাধিক রাজ্যকে সতর্ক করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তবে এতে তৃণমূল-সহ একাধিক বিরোধী দল আপত্তি তুলে বলে যে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণের বৈঠকে এই বিষয় টেনে এনে রাজনীতি করতে চাইছে কেন্দ্র।

সম্প্রতি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১০টি রাজ্যে তাদের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (স্টেট জিডিপি বা এসজিডিপি) তুলনায় ঋণের বোঝা যথেষ্ট বেশি। শ্রীলঙ্কায় আর্থিক সঙ্কট তৈরি হওয়ার পরেই শীর্ষ ব্যাঙ্ক রাজ্যগুলির রাজকোষের হাল খতিয়ে দেখতে শুরু করে। খয়রাতি প্রকল্প নিয়ে সতর্কও করে তাদের।

বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার, রূপশ্রী, কৃষকবন্ধু থেকে শুরু করে অন্ধ্রপ্রদেশ, পঞ্জাব, রাজস্থান, হরিয়ানার বিভিন্ন নগদ-সহায়তার প্রকল্পগুলিকে চিহ্নিত করে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। গত মাসে ধর্মশালায় রাজ্যের মুখ্যসচিবদের সম্মেলনেও শ্রীলঙ্কার প্রায় দেউলিয়া দশার উদাহরণ তুলে ধরে রাজ্যগুলিকে এ বিষয়ে সতর্ক করে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। মূল বক্তব্য, রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে যেন ব্যয়ের সঙ্গতি থাকে। কোনও ভাবেই ঘাটতি এবং সেই সূত্রে কাঁধে চেপে বসা ঋণের বোঝা যাতে মাত্রাছাড়া না হয়।

গতকাল, মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি  বিশ্লেষণের জন্য একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়। সেই বৈঠকেই ভারতের নানান রাজ্যের রাজকোষের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তবে তাতে সব বিরোধী দলই আপত্তি তুলে বলে কেন্দ্র এই নিয়ে রাজনীতি করছে। জয়শঙ্করের বক্তব্য, “শ্রীলঙ্কা থেকে কী শিক্ষা নিতে হবে, তা খুব স্পষ্ট। আয় অনুযায়ী মেপে খরচ করতে হবে। দায়িত্বশীল ভাবে সরকার চালাতে হবে। খয়রাতি বা (যথেচ্ছ) নগদ অর্থ বিলির সংস্কৃতি চলবে না। সুশাসনের গুরুত্ব (শ্রীলঙ্কার ঘটনাতেই ফের) বোঝা গিয়েছে”।

তবে শ্রীলঙ্কার প্রসঙ্গ টেনে রাজ্যগুলিকে সতর্ক করলেও। জয়শঙ্কর অবশ্য দাবী করেছেন যে ভারতে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার তেমন আশঙ্কা নেই। তাঁর কথায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে অর্থনীতির ভিত শক্ত করতে নানান পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

এদিন সংসদ ভবনে কোন রাজ্যের রাজকোষের অবস্থা কেমন, কোন রাজ্যে কতটা ঋণ রয়েছে, তা সর্বদলীয় বৈঠকে তুলে ধরা হয় অর্থমন্ত্রকের তরফে। এও জানানো হয় যে খয়রাতি প্রকল্পের পাশাপাশি অনেক রাজ্যই বাজেটের বাইরে নানান সরকারি সম্পদ বন্ধক রেখে ঋণ নিচ্ছে, যা নিয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রক।

এদিনের এই বৈঠকের পর তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন যে যে সব রাজ্যের নাম তুলে ধরা হয়েছে, তাদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা অনেক ভালো। তবে বিদেশনীতির প্রশ্নে তৃণমূল কেন্দ্রের পাশে রয়েছে বলে তিনি জানান বৈঠকে। তবে প্রতিবাদ জানিয়ে এও বলেন যে শুধুমাত্র রাজ্যের নামই কেন বলা হচ্ছে।

Back to top button
%d bloggers like this: