রাজ্য

চপশিল্পের পর এবার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প, নিউ ব্যারাকপুরের ছাত্রের গবেষণাপত্রের বিষয়বস্তু রাজ্য সরকারের জনমুখী প্রকল্প

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেসমস্ত জনমুখী প্রকল্প এখনও পর্যন্ত শুরু করেছেন, তার মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় ও অন্যতম হল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প। রাজ্যের মহিলাদের স্বাবলম্বী করতে এই প্রকল্প বেশ সাড়া ফেলেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যেক মাসে মহিলারা ৫০০ টাকা করে ভাতা পান। এর জেরে উপকৃত হয়েছেন অনেক পরিবারই।

এবার মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত এই জনমুখী প্রকল্পই হয়ে উঠল উত্তর ২৪ পরগণার বারাসাতের পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের এক ছাত্রের গবেষণার বিষয়বস্তু। দুর্দিনে এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প কীভাবে তাঁর পরিবারকে সাহায্য করেছে, তা কোনওদিন ভুলবেন না প্রসেনজিৎ দাস। তাঁর কথায়, “ যে সমস্ত পরিবারের আয় খুব বেশি নয়, ভ্যান চালিয়ে, শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান, সেই সমস্ত পরিবারের কাছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের এই ৫০০ বা ১০০০ টাকাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি এটা গবেষণাপত্রে রাখার সিদ্ধান্ত নিই”।

নিউ ব্যারাকপুর তালবান্দা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের শহরপুরের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ দাস গরীব পরিবারের সন্তান, আর সেই কারণেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের টাকা কোনও গরীব পরিবারে ঠিক কতটা গুরুত্ব রাখে, তা তিনি ভালোমতো জানেন। চরম দুর্দিনের কথা স্মরণ করে প্রসেনজিৎ বলেন যে তাঁর মা এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা জমিয়েই সংসারে খরচ করতেন, রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার কিনতেন। এমনকি, প্রসেনজিতের নাচের শখ পূরণে দামি জুতো কিনতেও আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকাই। সেই কারণেই স্নাতকোত্তরের ফাইনাল ইয়ারে গবেষণাপত্র বা রিসার্চ স্টাডি পেপারের বিষয় হিসাবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পকেই বেছে নিয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র প্রসেনজিৎ।

ছোটো থেকেই আর্থিক অনটনের মধ্যেই বড় হয়েছেন প্রসেনজিৎ। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর থেকেই কাজ শুরু করে নিজের পড়াশোনা ও নাচটাকে বজায় রেখেছিলেন তিনি। স্নাতক পাশ করার পর পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি ন প্রসেনজিৎ। সম্প্রতি এক বাংলকা চ্যানেলের একটি রিয়্যালিটি শো-তে অংশগ্রহণও করেন তিনি। নাচের শিক্ষক হিসেবে কাজও করছেন প্রসেনজিৎ আপাতত।

এর পাশাপাশি পড়াশোনা, আড়তে কাজ করা সবই চলছে। প্রসেনজিতের কথায়, “আর্থিক দিক থেকে স্বাবলম্বী না হলে কাজ তো করতেই হয়”। প্রসেনজিতের দুই দাদা রয়েছে। তাঁর বড়দা মারুতি ডিলারশিপে হিসাব দেখার কাজ করেছেন ও মেজদা বাইরে থাকেন। বাবার একটি ছোটো মুদির দোকান রয়েছে। সকলে মিলে উপার্জন করে কোনওভাবে তাদের সংসার চলে যায়। তাই তাদের পরিবারে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা স্বয়ং ঈশ্বরের আশীর্বাদের সমতুল্য।

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পকে নিজের গবেষণার বিষয় করার পাশাপাশি রাজ্য সরকারের কাছে একটি আবেদনও জানিয়েছেন প্রসেনজিৎ। তাঁর কথায়, রাজ্য সরকারের এমন অনেক প্রকল্প রয়েছে, যা বিশেষ প্রয়োজনে পড়ে না। তাই গবেষণা করে দেখে সেই প্রকল্পগুলিকে বন্ধ করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা যদি বাড়ানো যায়, তাহলে অনেক পরিবার আরও বেশি উপকৃত হবে।

প্রসেনজিৎ জানান, “লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের টাকা যাদের প্রকৃত দরকার আছে, তাদেরই দেওয়া উচিত। এটা সার্ভে করে পরিবারের আয় দেখেই টাকা দেওয়া দরকার। যারা যোগ্য তারাই যেন টাকা পায়”।

Back to top button
%d bloggers like this: