সকালে লাঠিহাতে সামলান ট্র্যাফিক, রাতে হাতে রঙ-তুলি তুলে নিয়ে আঁকেন দেবীর চোখ, কলকাতার এই পুলিশ শিল্পীর হাতেই প্রাণ পান প্রতিমা

পুলিশকে নিয়ে মানুষের অভিযোগের শেষ থাকে না। পুলিশের কাজটাই এমন যে তাদের বাহ্যিকভাবে দেখলে মনে হয় তাদের মধ্যে যেন কোনও আবেগ নেই। তবে পুলিশের মধ্যেও যে এক শিল্পীসত্ত্বা লুকিয়ে থাকে, যা প্রমাণ করলেন জেমস লং সরণীর ট্র্যাফিক গার্ডের কনস্টেবল সুকুমার মণ্ডল।
বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা এই সুকুমার মণ্ডল সকাল হলে যেমন লাঠি হাতে নিয়ে ট্র্যাফিক সামলানোর কাজ করেন, তেমনই আবার রাত হলেই সেই হাত দিয়েই মূর্তি গড়েন তিনি। রঙ-তুলির টানে এঁকে দেন মূর্তির চোখ। পেশার কারণে পুলিশ হলেও মাটির মূর্তি গড়া তাঁর নেশা ও ধ্যানজ্ঞানই বটে।
সুকুমারবাবু জানান, “ছাত্রাবস্থা থেকে প্রতিমা গড়ায় আমার আগ্রহ। ক্লাস ফাইভে পড়াকালীন স্কুল থেকে ফেরার পথে পাড়ার ঠাকুর তৈরির স্টুডিওতে ঢুকে পড়তাম। সেখানেই বসে বসে প্রতিমা গড়া দেখতাম। ক্লাস এইটে পড়ার সময় একদিন নিজেই কালী মূর্তি তৈরি করলাম। এরপরের বছরই পাড়ার ক্লাবের জন্য থিমের প্রতিমা গড়ার বায়না পাই আমি। এরপর একে একে সরস্বতী, বিশ্বকর্মা-সহ আরও অনেক প্রতিমা গড়ার বরাত আসতে শুরু করে”।
পড়াশোনার ফাঁকেই মূর্তি গড়ার কাজ চালিয়ে যান সুকুমারবাবু। সেই মূর্তি বিক্রি করতেন বাঁশদ্রোণী বাজারে। তবে দেবী দুর্গার মূর্তি বানানোর প্রথম সুযোগ পান ক্লাস টুয়েলভে পড়াকালীন। পাড়ারই এক বারোয়ারি পুজোতে দুর্গা প্রতিমা বানানোর বরাত পান তিনি। সেই বরাত পেয়েই প্রবীণ প্রতিমাশিল্পীর থেকে চোখ আঁকায় হাতেখড়ি নেন তিনি। শেখেন প্রতিমার বাঁশ-খড় বাঁধার কৌশলও।
স্থির করেন যে প্রতিমা বানানোকেই পেশা হিসেবে নেবেন তিনি। কিন্তু ভগবানের ইচ্ছা ছিল অন্যরকম। হঠাৎই সুকুমারবাবুর মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়েই চাকরি খুঁজতে শুরু করে তিনি। নানান পরীক্ষা দেন চাকরির। ২০০৯ সালে কলকাতা পুলিশে নির্বাচিত হন তিনি। কাজে যোগ দেওয়ার পর মূর্তি তৈরির কাজ বন্ধই হয়ে যায়।
তবে বেশিদিন দূরে থাকতে পারলেন না সুকুমারবাবু। ফের ঠাকুর গড়ার কাজ শুরু করেছেন তিনি। সুকুমারবাবু জানান, “এখন কাজ থেকে ফিরে রাতে স্টুডিওতে মূর্তি তৈরি করি। পরিচিতরা অনেকেই আমায় প্রতিমা গড়ার বায়না দেয়। এবছর যেমন ৯টা দুর্গামূর্তি তৈরি করছি”। ট্রাফিক গার্ডের সহকর্মীদের কাছ থেকেও এই কাজে উৎসাহ পান সুকুমারবাবু।