রাজ্য

সবার উপরে মানুষ সত্য! ঈদের নমাজ সেরেই ‘পিতৃসম’ কাকার শেষকৃত্য করলেন মুজিবর, মস্তক মুণ্ডন করে করলেন শ্রাদ্ধের কাজ

বাবার মতোই ভালোবাসতেন। সমস্ত আপদে-বিপদে পাশে দাঁড়াতেন। সেই কারণেই পিতৃসম কাকা সমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য করলেন মুজিবর শেখ। মস্তক মুণ্ডন করে শ্রাদ্ধের যাবতীয় কাজ করলেন পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর কাষ্ঠশালীর এই বাসিন্দা। মুজিবরের কথায়, “উনিই শিখিয়েছিলেন, সবার উপড়ে মানুষ সত্য, তাহার উপড়ে নাই। সেটাই মেনে চলছি”।

সমরেন্দ্রনাথবাবু স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী হিসেবে নিজের কর্মজীবন শেষ করেন। পূর্বস্থলীর চুপির বাসিন্দা প্রাক্তন ওই স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। গত শনিবার ‘ঘাট কামান’ ছিল তাঁর। সেখানে মস্তক মুণ্ডন করেন তাঁর দুই ছেলে অমিতাভ এবং অরুণাভ। আর তাদের সঙ্গেই ছিলেন মুজিবর। এদিন মন্ত্রোচ্চারণ করে শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুজিবর।

এই বিষয়ে অমিতাভ বলেন, “আমার বয়স প্রায় ৪৯ বছর। মুজিবর আমারও কাছাকাছি বয়সের। ছোট থেকেই আমাদের বাড়িতে ওঁর অবাধ যাতায়াত। একসঙ্গে পড়াশোনা, খেলাধুলা সব করেছি। বাবা ওঁকে আমাদের মতোই ভালবাসতেন। বাবা অসুস্থ হওয়ার পরে মুজিবর সব সময় পাশে ছিল। শ্মশানেও গিয়েছিল”।

শনিবার ঈদের নমাজ শেষ করে মস্তক মুণ্ডন করে সমরেন্দ্রনাথের দুই ছেলের সঙ্গে শ্রাদ্ধ ও কামানের সমস্ত কাজ করেন মুজিবরও। অমিতাভ জানান, “এ দেশে সাম্প্রদায়িক হানাহানির খবর শুনি। অথচ আমাদের আশপাশে মুজিবরের মতো মানুষও রয়েছে। মিলেমিশেই তো থাকার কথা”।

মুজিবরের কথায়, “অমিতাভ, অরুণাভর সঙ্গে একসঙ্গে মানুষ হয়েছি। এ বাড়ির ছেলের মতোই বড় হয়েছি। ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করা যায়, এমনটা দেখিনি কখনও। তাই বাবার মৃত্যুর পরে ঠিক করি, শেষকৃত্যের যাবতীয় অনুষ্ঠান হিন্দুশাস্ত্র মেনে পুত্রের মতোই পালন করব”। তিনি এও জানান যে এই কাজের জন্য কেউ কেউ তাঁকে নানান কথাও শুনিয়েছেন। তবে সেই কথায় কান দিতে নারাজ মুজিবর।

Back to top button
%d bloggers like this: