মৃতা মায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে অ্যাম্বুলেন্স দান আইপিএসের, সেই নাম মুছে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি লাগানোর অভিযোগ তৃণমূল যুব ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে

মায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে স্থানীয় ক্লাবের অ্যাম্বুলেন্স কেনার জন্য এক লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন আইপিএস অফিসার। অ্যাম্বুলেন্সের গায়ে লেখা ছিল তাঁর মৃতা মায়ের নামও। কিন্তু আচমকাই সেই নাম মুছে তাতে তৃণমূলের নাম লিখে সেই একই অ্যাম্বুলেন্স ফের নতুন করে উদ্বোধন করা হল।
আসলে, ২০১৮ সালে উত্তরপাড়া মাখলার সেবক সংঘ ক্লাব অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা চালু করে। এলাকার মানুষের পরিষেবা দেওয়াই ছিল একমাত্র উদ্দেশ্য। সেই কারণে চাঁদা তুলে অ্যাম্বুলেন্স কেনা হয়। সেই সময় মৃত্যু হয় মাখলা অঞ্চলের বাসিন্দা বর্তমানে অসমে কর্মরত আইপিএস আনন্দ মিশ্র তাঁর মা শান্তি মিশ্রর। পাড়ার ক্লাবের ছেলেরা অ্যাম্বুলেন্স কিনছে জানতে পেরে এক লক্ষ টাকা অনুদান দেন তিনি। অ্যাম্বুলেন্সের গায়ে তাঁর মায়ের নামও লেখা হয়।
কিন্তু অভিযোগ, গত শনিবার সেই অ্যাম্বুলেন্সই নতুন করে উদ্বোধন করেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। অ্যাম্বুলেন্সের গায়ে শান্তি মিশ্র এবং ক্লাবের নাম তুলে দিয়ে লেখা হয় উত্তরপাড়া শহর তৃণমূল ছাত্র ও যুব কংগ্রেস। এই নিয়ে বিজেপির অভিযোগ, নাম পরিবর্তন করা তৃণমূলের সংস্কৃতি। অন্যদিকে, তৃণমূলের দাবী, ক্লাব চালাতে পারছিল না তাই অ্যাম্বুলেন্সটি তৃণমূল ছাত্র যুবকে দিয়ে দিয়েছে।
কোনও রাজনৈতিক দলকে কেন এভাবে অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। এই বিষয়ে ক্লাবের প্রাক্তন সম্পাদক দেবাশিস ভৌমিক জানান যে তিনি এই বিষয়টি জানতে পেরেছেন। উত্তরপাড়া থানায় এই বিষয়ে জানিয়েছেন তিনি। কারণ ওই অ্যাম্বুলেন্সটি এখনও তাঁর নামেই রেজিস্টার করা রয়েছে। আইপিএস মিশ্র তাঁর মায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য এক লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।
এই বিষয়ে ক্লাবের বর্তমান সদস্য সৌরভ দাস বলেন, “অ্যাম্বুলেন্স ক্লাবেই আছে। কোনও নাম পাল্টানো হয়নি। অ্যাম্বুলেন্স পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছিল। আইপিএস আনন্দ মিশ্র পাড়ার গর্ব। তাঁর মায়ের নাম অ্যাম্বুলেন্সে থাকবে”।
অন্যদিকে, আনন্দ মিশ্রর ভাইপো রবি মিশ্র বলেন, “অ্যাম্বুলেন্সটা দেওয়া হয়েছিল এলাকার লোকেদের সুবিধার জন্য।আমরা জানতাম না যে অ্যাম্বুলেন্স অন্য জায়গায় দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার এক আত্মীয়ের পা ভেঙে গিয়েছিল তার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন ছিল কিন্তু পেলাম না। আমরা চাই অ্যাম্বুলেন্সটা যেরকম ছিল সেরকম থাকুক”।
স্থানীয় বিজেপি নেতা পঙ্কজ রায়ের কথায়, “তৃণমূলের একটা দীর্ঘদিনের অভ্যাস নাম পাল্টে দেওয়া। একজন আইপিএস অফিসার তাঁর মায়ের স্মৃতিতে অ্যাম্বুলেন্স কিনতে সাহায্য করলেন, আর তার নামটাই মুছে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস লিখে দেওয়া হল। এটা খুবই লজ্জার”।
অন্যদিকে, এই ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের হুগলি জেলা সভাপতি সম্বুদ্ধ দত্ত বলেন, “ওই ক্লাব অ্যাম্বুলেন্সটি চালাতে পারছিল না তাই আমাদের কাছে অনুরোধ করে মানুষের স্বার্থে আমরা পরিষেবা দিই। ক্লাবের কমিটি সিদ্ধান্ত আমাদের দিয়েছে। এরকম আরো দুটি ক্লাব আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের জন্য একের পর এক যেভাবে কাজ করছেন মানুষের ভরসার জায়গা তাই তৃণমূল কংগ্রেস লেখা। আমরা নতুন করে অ্যাম্বুলেন্সটাকে তৈরি করে কম খরচে মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। বিজেপির কোনও কাজ নেই। মানুষ যাতে কোনও পরিষেবা না পায়, মানুষকে কীভাবে বিভ্রান্ত করা যায় এই নিয়ে সারাদিন পড়ে আছে। কারণ সামনে ভোট আসছে”।