সেন্সর বোর্ডের কোপে ‘LSD’! ‘ভুলে যান আমি তৃণমূল বিধায়ক বা সায়নী তৃণমূল করে’, ছবির মুক্তি নিয়ে আশঙ্কার মাঝেই বললেন সোহম

সেন্সরের বোর্ডের কাঁচিতে পড়েছে ‘LSD’। আগামীকাল, শুক্রবার এই ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু তা হবে কী না, তা নিয়ে বেশ ধন্ধ তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত মিলেছে অনুমতি। তবে এই ছবির বেশ কিছু সংলাপ, শব্দ নিয়ে আপত্তি তুলেছে সেন্সর বোর্ড। তা নিয়ে ছবির পরিচালক, প্রযোজকদের পর চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগও উঠেছে। এবার এই নিয়ে মুখ খুললেন ছবি কলাকুশলীরা।
আজ, বৃহস্পতিবার প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন ‘LSD’ ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। এখানে এদিন উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও। তিনি এই বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, “কিছু অনভিপ্রেত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমাদের শিল্পীদের হয়রান করার চেষ্টা হয়েছে। সেটা যাতে না হয় তাই সোহম-সায়নীরা বক্তব্য রাখবেন”।
কুণাল ঘোষের কথায়, “এটা নিয়ে দেরি করলেন, হয়রান করলেন এর ফল হল পেতে দেরি হল। প্রচার হল না। আমরা কোথাও হস্তক্ষেপ করি না। কোথাও বলা নেই, অমুকের সঙ্গে মিশবেন না, ওই ছবি করবেন না। এসব বলি না। বিজেপি ক্যাডাররা যাতে টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিকে বিরক্ত করতে না পারে তার জন্য সোহমরা আজ এখানে। সিনেমাটা দেখুন ভালোভাবে দেখুন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যা করা হচ্ছে তা যেন গুরুত্ব না পায়”।
এই ছবির মূল অভিনেতা হলেন তৃণমূল বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী। তিনি এদিন বলেন, “এখানে রাজনৈতিক মুখপাত্র নন কুণালদা। আমাদের অভিভাবক হিসাবে এখানে এসেছেন। খুব দুর্ভাগ্যজনক এই মুহূর্ত। এটা অভিপ্রেত নয়। যাঁরা ছবির সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের কাছে এটা দুর্ভাগ্যজনক। লাল সুটকেসটা দেখেছেন? – এটা ১০ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে। একটু আগে পর্যন্ত ধন্দ ছিল। আমরা পার্টি কালার দিয়ে প্রভাবিত হই না। এটার মধ্যে দিয়ে সামাজিক বার্তা দিতে পারি। ভুলে যান আমি তৃণমূল বিধায়ক, সায়নী পার্টি করে। আমাদের যা শিক্ষা তাতে সমাজের কোনও ক্ষতি হবে না। আমরা একটা মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছি”।
ঠিক কী সমস্যা হয়েছে, তা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সোহম বলেন, “একজন মাত্র, পার্থসারথি চৌধুরী আপত্তি জানালেন। ‘রাধে রাধে’ বলা যাবে না, ‘কৃষ্ণ’ বলা যাবে, LSD বলা যাবে না। আমাদের এডিট করে বদলাতে হবে। অনেকে তাঁকে বুঝিয়েছেন কোনও ড্রা’গ প্রোমোট করা হয়নি। এমনকি এটাও বলা আছে ড্রা’গ নেবেন না। ডিরেক্টর জিজ্ঞেস করেন কেন করছেন এটা? পার্থবাবু বলেন, বম্বে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন। আমরা ভয়ে ছিলাম, একমাস পিছিয়ে যাবে ছবির মুক্তি। উনি বললেন, আমার ইন্ডাস্ট্রির প্রতি কোনও ঠেকা নেই। তাহলে এই চেয়ারটা কেন তিনি অসম্মান করছেন। তাহলে এমন কাউকে বসানো হোক, যায় দায়িত্ব আছে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে। সায়নী, কাঞ্চনরা রয়েছেন ছবিতে। প্রদীপ ধর রয়েছেন, যিনি বিজেপিতে গিয়েছিলেন। আমাদের তো বলা হয়নি, ওদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন না। আমরা তো শিল্পী। একে অপরের মতাদর্শকে সম্মান করে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারি। তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রক থেকে খবর আসে এটা নিয়ে সেন্সর থেকে কোনও অনুমোদন না দেওয়া হয়। এই দ্বিচারিতা কেন? রুপম ইসলাম একটা গান গেয়েছেন। তাতে দুটো শব্দ ‘হ্যালুসিনেশন’ আর ‘ওভারডোজ’ আছে। দর্শকদের কাছে এটা প্রশ্ন এটা কি এমন কোনও ছবি যেটা ‘A’ পাওয়ার যোগ্য? দর্শক শেষ বিচারক। তাদের হাতে তুলে দিলাম এই ভার”।
এই ছবির অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেন, “সবাইকে বলছি আমাদের পাশে দাঁড়ান। বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ান। তাহলে একটা সার্টিফিকেট পেতেই যদি এত সময় লেগে যায় তাহলে প্রযোজক ছবি নিয়ে এগোবেন কীভাবে? এই বয়কট কালচার কথা থেকে আসছে সেটা সবাই জানে। ‘পদ্মাবতী’ বলা যাবে না, ‘পদ্মাবত’ বলতে হবে। এমন সেন্সর বোর্ড চাই না যারা সমাজকে ১০০ বছর পিছিয়ে দেবে। রাধে রাধে বা কৃষ্ণ শব্দটা কী কারও মনোপলিতে রয়েছে? অভিনেতারা ভাবছেন, এটা বললে কাজটা করতে পারব কিনা? আউট অফ দ্য বক্স কিছু হচ্ছে না বলে বলা হচ্ছে। তাহলে আগামী দিনে বাইরে থেকে কেউ এসে বাংলা ছবির বাজারে লগ্নি করবেন? আমরা তো পলিটিক্সের বাইরে নই। আমরাও তার অংশ। তার সঙ্গে রয়েছি বলেই কি এই হয়রানি? যাদের বোধ, শিক্ষা রয়েছে তারা ভাবলেই এটা বুঝবে। কৃষ্ণ নিয়ে আমাদের কোনও অধিকার নেই? ভক্তি ভালোবাসার অধিকার আমাদের নেই? হ্যালোসিনেশন এই শব্দগুলো কি যথেষ্ট A সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য? আমরা ড্রাগের বিরুদ্ধে। যারা দেখছেন তারা কি ছবি দেখছেন নাকি দেখছেন শুধু কারা ছবিটা করছেন। A সার্টিফিকেট মানেই তো লিমিটেড দর্শক হয়ে গেল”।