বোকা বানিয়ে হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তকরণ করে জঙ্গি প্রশিক্ষণ, মুক্তির পথে বাঙালি পরিচালকের হাড়হিম করা বাস্তব প্রেক্ষাপটে তৈরি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’

আল্লাহই সর্বেসর্বা। তাঁর নির্দেশ মতোই সব কিছু ঘটে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে। আর তাঁর স্মরণে এলে কোনও বিপদ স্পর্শ করতে পারে না মেয়েদের। এমনটাই বুঝিয়ে মগজধোলাই করে ধর্মান্তকরণ মেয়েদের। তারপর? কী হয় তাদের সঙ্গে? কোথায় যায় তারা? এভাবেই একের পর এক হিন্দু-খ্রিষ্টান মেয়েরা রীতিমতো উধাও হয়ে যেতে থাকে কেরল থেকে। সেই বাস্তব কাহিনীই এবার সেলুলয়েডে তুলে ধরতে চলেছেন বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেন।
আগামী ৫ই মে মুক্তি পাচ্ছে বাস্তব জীবনের প্রেক্ষাপট নিয়ে তৈরি ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। যেদিন থেকে এই ছবি কথা সামনে এসেছে, তখন থেকেই এই ছবিকে ঘিরে নানান বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নানান রাজনৈতিক দলও এই ছবির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে বিশেষ করে কংগ্রেস। এই ছবি নিষিদ্ধ করার দাবী তোলা হয়েছে। তবে সমস্ত বিতর্ক পেরিয়ে এবার মুক্তি পেতে চলেছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’।
গত বছর মুক্তি পায় এই ছবি টিজার। আর তখন থেকেই এই ছবিকে ঘিরে চর্চা শুরু। কিছুদিন আএ ছবির ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে। আর এরপরই এই ছবিকে ঘিরে আরও উত্তেজনা। গোটা কেরল জুড়ে যেন ক্ষোভের সঞ্চার। ২০১৬ সালে কেরলে ২১ জন মেয়ের হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে সুদীপ্ত সেনের এই ছবি। ওই ২১ জন মেয়ে যোগ দেয় সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আইএসআই-এর প্রশিক্ষণ শিবিরে।
কিন্তু কেন হঠাৎ তারা এই নিষিদ্ধ সংগঠনে যোগ দিল? কীভাবেই বা তারা সিরিয়া ও আফগানিস্তানের এই জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষণ শিবিরে পৌঁছল? কেনই বা ধর্মান্তকরণে রাজি হল ওই মেয়েরা কারণ তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল হিন্দু আর কিছু খ্রিষ্টান। এই সমস্ত ঘটনাই তুলে ধরা হয়েছে এই ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র মাধ্যমে।
ছবির ট্রেলারে দেখানো হয়েছে, নানান হিন্দু মেয়েদের এটা বোঝানো হচ্ছে যে আল্লাহই সর্বেসর্বা। তাঁর কারণেই সবদিক রক্ষা পায়। এক হিন্দু মেয়ের সঙ্গে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটলে তাঁকে এটা বোঝানো হয় যে আল্লাহ মুসলিম মেয়েদের রক্ষা করেন আর তাদের সম্মানহানি থেকে বাঁচান তিনি। এমনভাবেই ফাঁদে ফেলে হিন্দু বা খ্রিষ্টান মেয়েদের বিয়ে করেন ইসলাম ধর্মের পুরুষরা।
আর তারপরই শুরু হয় সেই মেয়েদের উপর অত্যাচার। বিয়ে করার ফলে মেয়েদের ধর্মান্তকরণ করানো হয়। আর তাদের কেরল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় সিরিয়া ও আফগানিস্তানে। সেখানে জঙ্গি সংগঠন আইএসআই-য়ের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় ওই মেয়েদের। কীভাবে কেরল ধীরে ধীরে সন্ত্রাসবাদীদের ‘সেভ হেভেন’ হয়ে উঠল, তা দেখানো হয়েছে এই ছবিতে।
আর তা ঘিরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে রাজনৈতিক মহলে। কংগ্রেসের মতে, এই ছবিতে যা দেখানো হয়েছে, তা আসলে মিথ্যে। এটা করে একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে অপমান করা হয়েছে। তাদের মতে, এই ছবি একটি প্রোপ্যাগান্ডা ছবি যা ইসলামের বিরুদ্ধে হিংসা তৈরি করবে।
এই প্রথমবার নয়, এর আগেও বিবেক অগ্নিহোত্রীর ছবি ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নিয়েও ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। নব্বইয়ের দশকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপর নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছিল সেই ছবি। আর তা মুক্তি পেতে যেন গোটা দেশ কেঁপে উঠেছিল। এই ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটিও যে এক ঐতিহাসিক ছবি হয়ে থাকবে, তা বলাই বাহুল্য যদি না তা মুক্তির পথে আর কোনও বাধা আসে।
তবে এটা মানতেই হবে, ধীরে ধীরে সাহসী হয়ে উঠছে ভারত। আর সেই কারণেই তো এমন সব হাড়হিম করা বাস্তব জীবনের ঘটনা নিয়ে ছবি বানিয়ে তা গোটা দেশবাসীকে দেখাতে সাহস পাচ্ছেন পরিচালক-প্রযোজকরা। শুরুটা তো এমনভাবেই হয়। এভাবেই হয়ত আগামীদিনেও এমন আরও নানান বাস্তব ঘটনার কথা দেশবাসী জানতে পারবে নানান ছবির মাধ্যমে।