বিস্ময়কর! সূচ ফোটাতেই প্রাণ ফিরল অবশ পায়ে, মাত্র ২ টাকাতেই বিরল রোগের চিকিৎসা করল কলকাতার হাসপাতাল

পায়ে সামান্য একটা ঘা আর সেটাই ধারণ করল মারাত্মক রূপ। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পায়ের রক্ত চলাচল। বাইপাসের ধারের বেসরকারি হাসপাতাল জানিয়েই দিয়েছিল যে পায়ের গোড়ালি কেটে বাদ দিতে হবে বছর সত্তরের রাহুল ভট্টাচার্যের। শেষমেশ তিনি শরণাপন্ন হন কলকাতার আকুপাংচার হাসপাতালে। কোনও ওষুধ না, শুধুমাত্র সূচ ফুটিয়েই সারল সেই বিরল রোগ। একমাসের মধ্যেই অবশ পায়ে ফিরল প্রাণ। এখন দিব্যি হেঁটেচলে বেড়াচ্ছেন রাহুলবাবু।
কলকাতায় রাজ্য সরকারের একমাত্র আকুপাংচার হাসপাতাল ডা. বি কে বসু মেমোরিয়াল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট অফ আকুপাংচারের ডিরেক্টর ডা. হীরালাল সামন্ত জানান যে চিকিৎসায় অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। বার্জারস ডিজিজের একমাত্র উত্তর আকুপাংচার।
কিন্তু এই অসুখটি আসলে কী? চিকিৎসকদের কথায়, যারা সাধারণত অতিরিক্ত ধূমপান করেন, তাঁদের মধ্যেই এই অসুখ দেখা যায়। তামাকের নিকোটিন ধমনির মধ্যে ভ্যাসোস্পাজম ঘটায়। এর ফলে ধমনির মধ্যে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। যে রাজ্যে ধূমপায়ী বেশি, সেখানে বার্জারস ডিজিজের রোগীর সংখ্যাও অধিক বলে জানা গিয়েছে।
এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হল পায়ের নখ কালো হয়ে যাওয়া। পায়ের ধমনিগুলো বন্ধ হয়ে যায়। সামান্য পা ফেটে গেলেও তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। সত্তরোত্তর এই ব্যক্তির আকুপাংচার হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয় মাত্র দু’টাকা দিয়ে টিকিট কেটে।
জানা গিয়েছে, এই পদ্ধতিতে প্রায় ছয় থেকে আটটা সূচ ফোটানো হয় পায়ে। সেগুলি প্রায় কুড়ি থেকে তিরিশ মিনিট থাকে। সপ্তাহে অন্তত চারবার হয় এই প্রক্রিয়া। জানা গিয়েছে টানা চারমাস যদি চিকিৎসা করা হয়, তাহলে বার্জারস ডিজিজ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সূচ ফোটালে নতুন রক্তনালির সৃষ্টি হয় ফলে গ্যাংগ্রিন বাড়তে পারে না।
রাজ্যের একমাত্র আকুপাংচারের সরকারি হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই চিকিৎসা হয়। স্রেফ দু’টাকার টিকিট কাটলেই চলে। হাসপাতালের ডিরেক্টর ডা. হীরালাল সামন্ত জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারই সূচ কিনে দেয়। এই মুহূর্তে গড়ে চল্লিশজন করে রোগী আসেন এই হাসপাতালে। চিকিৎসকদের কথায়, শুধুমাত্র আর্থ্রাইটিস বা স্নায়ুর চিকিৎসা নয়, আকুপাংচারের মাধ্যমে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।
একসময় রাজ্যে তেত্রিশটা সেন্টার ছিল। যা এখন কমতে কমতে দাঁড়িয়েছে বাইশটিতে। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ আকুপাংচার কাউন্সিলের রেজিস্টার্ড প্র্যাকটিশনার প্রায় পাঁচশো। এদের প্রত্যেকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর রয়েছে। আকুপাংচার চিকিৎসকের সংখ্যা পাঁচশো হলেও মাত্র দেড়শো জন মতো এর প্র্যাকটিস করছেন। হীরালাল সামন্ত জানান, “অনেকেই ভাবছেন এই স্ট্রিমে গিয়ে কী হবে? অথচ যাঁরা প্র্যাকটিস করছেন তাঁরা যথেষ্ট ভাল আয় করছেন”।