দেশ

শিকাগোর বিশ্বধর্ম সম্মেলনে বিবেকানন্দের বক্তৃতা যা পরবর্তীতে ইতিহাসে পরিণত হয়, সেদিন ঠিক কী বলেছিলেন স্বামীজি?

১৮৬২ সালের ১২ই জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছিলেন মহান ব্যক্তি স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁর বাবার নাম ছিল বিশ্বনাথ দত্ত ও মা ছিলেন ভুবনেশ্বরী দেবী। সন্ন্যাস গ্রহণ করার আগে পর্যন্ত স্বামীজির নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। তবে পরবর্তীতে গোটা বিশ্বের কাছে তিনি পরিচিত হন স্বামী বিবেকানন্দ নামে। আজ তাঁর জন্মজয়ন্তী। এই দিনটিকে ‘জাতীয় যুব দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।

ধর্ম, বেদ, বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য, সবেতেই অগাধ জ্ঞান লাভ করেছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের এই শিষ্য। তাঁর নানান বাণী আজও তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে, নতুন পথের দিশা দেখায়। ১৮৯৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর শিকাগো বিশ্বধর্ম সম্মেলনে তাঁর ঐতিহাসিক বক্ত‍ৃতা পেশ করেন বিবেকানন্দ। হিন্দু ধর্ম ও ভারতীয় দর্শনের উপর তাঁর সেই বক্ত‌ৃতা ইতিহাস সৃষ্টি করে। তাঁর বক্ত‌ৃতা শেষ হওয়ার পর পুরো ২ মিনিট ধরে মুগ্ধ দর্শকমণ্ডলী উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছিলেন।

নিজের সেই বক্তৃতায় কী বলেছিলেন বিবেকানন্দ, জেনে নেওয়া যাকঃ

বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন-

  • “হে আমার আমেরিকান ভাই ও বোনেরা, তোমরা আমাকে যে ভালোবাসা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছ, তা আমার হৃদয় পূর্ণ করে দিয়েছে। বিশ্বের প্রাচীনতম সাধু-সংস্কৃতি ও সব ধর্মের জননীর তরফ থেকে আমি তোমাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। হিন্দুদের সকল জাতি ও সম্প্রদায়ের তরফে আমি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি”।
  • “আমি সেই ধর্মের অংশ হওয়ায় গর্ববোধ করি, যে ধর্ম গোটা বিশ্বকে সহ্যশক্তি ও গ্রহণক্ষমতার শিক্ষা দিয়েছে। আমরা মনে করি সকল ধর্মই সত্য”।
  • “আমি আরও গর্বিত, কারণ আমি সেই দেশের মানুষ, যে দেশ সব ধর্মের মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে”।
  • “এই পবিত্র ধর্ম সম্মেলন গীতার সারাংশেরই অনুরূপ। গীতায় বলা হয়েছে, ‘যে আমার কাছে আশ্রয় চাইবে, আমি তাঁকেই আশ্রয় দেব। মানুষ যে পথই অবলম্বন করুক, যত কষ্টই পাক, শেষে সবাই আমার কাছেই আসবে”।
  • “যেমন বিভিন্ন নদী বিভিন্ন জায়গা থেকে উত্‍পন্ন হয়ে বিভিন্ন পথ ধরে চলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সবাই সমুদ্রে মিলিত হয়। ঠিক তেমনই বিভিন্ন মানুষ তাঁর পছন্দমতো বিভিন্ন ধর্মের পথ বেছে নিতে পারেন। আপাতদৃষ্টিতে এই পথ আলাদা মনে হতে পারে, কিন্তু এই সব পথই ঈশ্বরের কাছে গিয়ে মিলিত হয়”।
  • “এই রাক্ষসরূপ ধর্মীয় হানাহানি যদি না থাকত, তাহলে মানব সভ্যতা আরও সুন্দর হত। কিন্তু এখন সময় এসেছে এই হিংসা ও হানাহানি বন্ধ করার। এই বিশ্বধর্ম সম্মেলন তারই প্রমাণ। তরোয়ালের থেকে এবার কলমের ক্ষমতা এবার বেশি হবেই”।
  • “সাম্প্রদায়িক হিংসা এবং অন্য ধর্মে প্রতি অসহনশীলতা এই সুন্দর ভূমিকে বারবার আক্রমণ করেছে এবং পৃথিবীকে বারবার রক্তে রাঙিয়ে তুলেছে। জানিনা এই ধর্মীয় হানাহানির কারণে কত সভ্যতা এবং কত দেশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে”।
Back to top button
%d bloggers like this: