দেশ

বিজেপির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা আর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার তীব্র লোভ! নিজের দোষে শিবসেনাকে পতনের মুখে ঠেলে দিলেন বাল ঠাকরের পুত্র উদ্ধব ঠাকরে

বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে টালমাটাল অবস্থা। অবশেষে সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল রাতেই ইস্তফা দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধভ ঠাকরে। ফেসবুক লাইভে এসে তিনি নিজের ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এদিন বিধান পরিষদ থেকেও ইস্তফা দেন তিনি।

সম্প্রতিই উদ্ধব ঠাকরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী তথা শিবসেনার নেতা একনাথ শিন্ডে। প্রায় ৪০ জন বিধায়ককে নিয়ে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন তিনি। মহারাষ্ট্র ছেড়ে প্রথমে গুজরাত ও পরে অসমে যান শিন্ডে। সেই সময় কার্যত আভাস মিলেছিল যে শিবসেনা কার্যত ভাঙনের মুখে। এরই মধ্যে আজ, বৃহস্পতিবার বিশেষ অধিবেশনে আস্থা ভোটের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

তবে এর বিরোধিতা করে শিবসেনা। তাদের দাবী ছিল যে মহারাষ্ট্রের বিদ্রোহী বিধায়কদের বিরুদ্ধে বিধানসভায় আইন আনা হয়েছে। এর মধ্যে আস্থা ভোট সম্ভব নয়। কিন্তু শীর্ষ আদালত তাতে সায় না দিয়ে আস্থা ভোটের নির্দেশ জারি রাখে। আজ বেলা ১১টা থেকে শুরু হবে এই আস্থা ভোট, চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

এর জেরে বেশ চাপের মুখেই পড়ে যান উদ্ধব ঠাকরে। আর এরই মাঝে গতকাল রাতে ইস্তফা দেন তিনি। এদিন ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, “কার উপর রাগ আপনাদের। কোনও সমস্যা হলে আপনারা ‘মাতোশ্রী’তে আসতে পারতেন। সুরাট বা গুয়াহাটি যাওয়ার কী প্রয়োজন ছিল”? উদ্ধব ঠাকরে আরও বলেন, “আমি ইস্তফা দিচ্ছি। মহারাষ্ট্রের মানুষের আশীর্বাদ আমি পেয়েছি। এটাই আমার জন্য অনেক”।

 

কিন্তু এবার প্রশ্ন উঠছে যে কেন হঠাৎ শিবসেনা এমন পরিস্থিতি তৈরি হল? শিবসেনার মতো দল, সেই দলের আদর্শ, বাল ঠাকরের আদর্শকে চিরকাল শ্রদ্ধা করে এসেছেন সকলে। তাহলে বর্তমান পরিস্থিতি এমন কেন হল যে সে বাল ঠাকরের পুত্রকে নিজের পদ থেকে এভাবে সরে আসতে হল?

প্রশ্ন এও উঠছে যে একপ্রকার নিজের লোভের কারণেই কী শিবসেনাকে এমন পতনের মুখে ঠেলে দিলেন উদ্ধব ঠাকরে। আসলে মহারাষ্ট্রে ২০১৯ সালে বিধানসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন লড়ে শিবসেনা। ফলাফলে দেখা যায় বিজেপির আসন সংখ্যা শিবসেনার প্রায় দ্বিগুণ। স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি থেকেই কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানোর কথা ভাবা হয়।

কিন্তু সেইসময় উদ্ধব ঠাকরে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হতে। আর সেই কারণে বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙে কংগ্রেস ও এনসিপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয় তারা। এর জেরে ভোটের আসন সংখ্যার ম্যাজিক সংখ্যা পেরিয়ে যায় এই জোট ও মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেন উদ্ধব ঠাকরে।

সম্প্রতি, একনাথ শিন্ডে অভিযোগ তোলেন যে শিবসেনা যে নীতি নিয়ে সরকার গঠন করেছিল বা শিবসেনা যে নীতি নিয়ে চলে তা কোনওভাবেই মানা হচ্ছে না উদ্ধব ঠাকরের সরকারে। এর জেরেই বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন তারা। দল না ছাড়লেও, উদ্ধব ঠাকরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন তারা।

কিন্তু এবার কথা হচ্ছে, ২০১৯-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর যদি উদ্ধব ঠাকরে বিজেপির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করে অন্য জোট না গঠন করতেন, তাহলে আজ শিবসেনাকে এমন পতনের মুখে পড়তে হত না। বিজেপির তরফে এও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল যে প্রথম আড়াই বছর বিজেপির কোনও নেতা মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন ও পরের আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসবেন উদ্ধব ঠাকরে। কিন্তু তা মেনে নেন নি বাল ঠাকরের পুত্র। তাঁর ক্ষমতা পাওয়ার লোভই আজ শিবসেনার পতনের মূল কারণ, অন্তত এমনটাই মত বিশেষজ্ঞ মহলের।

Back to top button
%d bloggers like this: