প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে Z+ নিরাপত্তায় ভাইপোর বিলাসবহুল শিলিগুড়ি সফর! ঘনাল প্রবল বিতর্ক!
যত বিধানসভা নির্বাচন আসছে তত শাসক দলের অন্দরে টেনশনের পারদ চড়ছে। আগামী বছর বাংলার মসনদে পুনরায় যাতে বুঝতে পারেন সে জন্য মরিয়া হয়ে রাজ্যজুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন মমতা। সেইসঙ্গে ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিজের জায়গাটুকু অক্ষত রাখতে পিসির সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন সফরে। কিন্তু এই সফর নিয়ে এবার উঠেছে বিতর্কিত প্রশ্ন।
বাংলার বার্তা নাম একটি সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিক সন্ময় বন্দোপাধ্যায় এবার এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন যা তৃণমূলের দুর্নীতি পরায়ণ দিকটি ফের প্রকাশ্যে এনেছে। সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের পলিটিকাল স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোর দুদিনের শিলিগুড়ি সফরে গিয়েছিলেন। সেই সফরে যেভাবে জনগণের ট্যাক্সের টাকা দেদার খরচ করা হলো তাতে উঠছে বেশ কিছু প্রশ্ন।
এই শহরে জেড প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা নিয়ে গিয়েছিলেন অভিষেক এবং প্রশান্ত। সঙ্গে ছিল কুড়িজন নিরাপত্তারক্ষী। বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে ৩০ টি গাড়ির কনভয় নিয়ে হোটেলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন তৃণমূলের যুবরাজ! তিনি এবং প্রশান্ত কিশোর শিলিগুড়ির সবচেয়ে দামি হোটেল জে ডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেলে ছিলেন। বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে এই হোটেলের দূরত্ব গাড়িতে মোটামুটি কুড়ি কিলোমিটার। যেদিন প্রশান্ত এবং অভিষেক এই রাস্তা দিয়ে গিয়েছিলেন সেদিন আচমকাই এই কুড়ি কিলোমিটার রাস্তায় যতগুলো দোকান আছে সেই সকল দোকানের মালিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে দোকান বন্ধ রাখা হয়!
এরপর যে মিটিং হয় সেখানে উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ তৃণমূল নেতা নেত্রীরাই যাননি এদিকে ভাইপো নাকি গিয়েছেন উত্তরবঙ্গের তৃণমূলের হাল-হকিকত বুঝতে। উত্তরবঙ্গের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এই মিটিংয়ে যাননি। অন্যতম উচ্চপদস্থ তৃণমূল নেতা মিহির গোস্বামী বলছেন তিনি নাকি জানতেনই যে এইরকম একটি মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে। তাহলে দুদিনের শিলিগুড়ি সফরে কী করতে গিয়েছিলেন প্রশান্ত এবং অভিষেক?
তাদের এই দুই দিনের সফরের জন্য রাজ্য সরকারের কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কারণ আমরা জানি জেড প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা সমস্ত খরচা বহন করে রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকার এই টাকাটা কোথা থেকে পায়? অবশ্যই জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে। এখন প্রশ্ন উঠছে এটাই যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কি কোন মন্ত্রী? তিনি কি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী? তিনি কি ওই এলাকার বিধায়ক না সাংসদ? প্রশান্ত কিশোর এমন কে যার জন্য এই নিরাপত্তা দিতে হবে? তাহলে জনগণের কোটি কোটি টাকা খরচ করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশান্ত কিশোর শিলিগুড়ি সফরে কেন গিয়েছিলেন?
কেন সেদিন ওই দোকানদারদের দোকান আচমকা বন্ধ রাখা হল? রাজ্য সরকার কি তাদের এক বেলার ক্ষতি পূরণ করে দিতে পারবে? করোনা আবহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারংবার গান গেয়ে যাচ্ছেন যে রাজ্য সরকারের ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা। তার প্রতিটি বক্তব্যে উঠে আসে কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিচ্ছে না তাই রাজ্য সরকারের কোষাগার এখন শূন্য।
তাহলে এই শূন্য কোষাগার থেকে কী করে তাঁর ভাইপো এবং প্রশান্ত কিশোরের জন্য কোটি কোটি টাকার আয়োজন হল এই সফরের জন্য? প্রশ্ন করেছেন এই বর্ষীয়ান সাংবাদিক। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে এই সফরের কি খুব দরকার ছিল? এই সফরের ফলে দলে কী সাফল্য এলো তা জানতে চাওয়া হলে তৃণমূলের সকলেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
উত্তরবঙ্গে মমতার উপর ক্ষিপ্ত তার দলের লোকেরাই। তিনি ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে কিছুদিন আগেই উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছিলেন এবং সেখানকার নেতা-নেত্রীদের ক্ষোভের আঁচ তিনি টের পেয়েছেন। এর পরেই তার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোর যেভাবে উদ্দেশ্যহীন হয়ে এই সফরে গেলেন এবং রাজ্যের সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের কোটি কোটি টাকা সোজা কথায় উড়িয়ে দিলেন দুদিনে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের অন্দরেই। অনেকেই বলছেন এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল কী হতে চলেছে।