জোটে ফাটল স্পষ্ট! আব্বাসের দলকে মালদহ-মুর্শিদাবাদ থেকে একটিও আসন ছাড়ল না কংগ্রেস

বাম শিবির আব্বাস সিদ্দিকীর সামনে মাথানত করেছে। মুসলিম ভোট পেতে নবাগত আব্বাসের দলের সামনে মাথানত করছে ৩৪ বছর পশ্চিমবঙ্গ শাসন করা একটি দল। ছেড়ে দিয়েছে নন্দীগ্রাম, ভাঙড়ের মতো আসন। পছন্দের আসন বেছে নিতে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফন্টকে।
কিন্তু আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে মতবিরোধ রয়েছে কংগ্রেসের। বামেদের ব্রিগেডেই প্রশ্ন উঠেছিল সংযুক্ত জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে। পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর দল আইএসএফকে নিয়ে কংগ্রেস যে খুব একটা খুশি নয়, তা বোঝা গিয়েছিল রবিবারের মেগা শো’তে।
বাম শিবিরের সঙ্গে আব্বাসের আসন নিয়ে বোঝাপড়া হয়ে গেলেও কংগ্রেসের সঙ্গে এখনও চলছে বনিবনা। আর সেটার জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত গতকাল ব্রিগেডের মঞ্চেই দেখা গিয়েছে। ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের প্রধান আব্বাস সিদ্দিকী গতকাল ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে ঐক্যের বার্তা দেওয়ার বদলে কংগ্রেসকে কার্যত হুঁশিয়ারির সুরেই বলেছে যে, তাঁরা তোষামোদ করবে না। তাঁরা নিজেদের হক ছিনিয়ে নেবে।
আরও পড়ুন:আজ থেকে আমজনতার টিকাকরণ কর্মসূচী শুরু, প্রথম টিকা নিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
আরেকদিকে, আব্বাস সিদ্দিকীর সামনে ঝুঁকতে নারাজ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীও। নিজের অবস্থানে অনড় থেকে তিনিও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর দলকে মালদহ – মুর্শিদাবাদ থেকে একটিও আসন ছাড়া হবে না। অধীর চৌধুরীর এই সিদ্ধান্তে সংযুক্ত মোর্চার জোট গঠনের আগেই ফাটল স্পষ্ট দেখা দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আব্বাস সিদ্দিকীর দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টকে ইতিমধ্যে নন্দীগ্রাম আর বামেদের দুর্গ বলে পরিচতি ভাঙড় আসন ছেড়ে দিয়েছে আলিমুদ্দিন। এই দুটি আসন থেকেই আব্বাস সিদ্দিকীর আত্মীয়দের দাঁড় করানোর কথা সামনে আসছে। আর এবার আব্বাস সিদ্দিকীর অন্যতম লক্ষ্য হল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আধিক্য যুক্ত মালদহ আর মুর্শিদাবাদের আসন গুলো। তবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী নিজের গড় থেকে একটিও আসন আইএসএফ-কে ছাড়বে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
আসন নিয়ে দুপক্ষের এহেন অনড় সিদ্ধান্তে বেজায় ঝামেলায় পড়েছে আলিমুদ্দিন। ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন নিয়ে আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে জোট করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বামেরা। অন্যদিকে, তাঁদের পুরনো সঙ্গী কংগ্রেসের হাতও ধরে রাখতে চায় তাঁরা। তবে কংগ্রেস আর আইএসএফ মধ্যে থেকে বামেরা নিজেরাই বিপাকে পড়ে গিয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে আসন ছাড়া নিয়ে কংগ্রেস ও ভাইজানের দড়ি টানাটানি এতদিন ছিল চার দেওয়ালের মাঝে। রবিবার ‘ভাইজান’ই তা প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন। ব্রিগেডের মঞ্চে ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম চরিত্র অধীররঞ্জন চৌধুরীর উপস্থিতিতেই এই নবাগত রাজনৈতিক বলেন, “তোষণের নয়, অংশীদারির রাজনীতি করতে এসেছি।” মঞ্চ থেকেই তাঁর সমর্থকদের প্রতি বামেদের ভোট দেওয়ার নির্দেশ দিলেও অপর জোটসঙ্গী কংগ্রেস সম্পর্কে নীরব থাকেন ভাইজান। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টিকে যে তিনি ভালভাবে নিতে পারেননি, কালক্ষেপ না করে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রদেশ সভাপতি। বুঝিয়ে দিয়েছেন, ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টকে এখনও তিনি জোটের অংশীদার মানতে নারাজ।
গতকাল ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী নিজের দলের সমর্থকদের বামেদের ভোট দিতে বলেছেন। কিন্তু বামেদের ভোট দিতে বললেও জোটের অন্যতম সঙ্গী আব্বাস সিদ্দিকীর দলকে নিয়ে তিনি মুখ খোলেন নি। এই বিষয়ে অধীরবাবু বলেন, “বাম-কংগ্রেসের জোট এখনও অমিমাংসিত। দুই দলের আসনরফা সম্পূর্ণ হলে অন্যদের নিয়ে ভাবব।”