‘এভাবেই মেরুদণ্ডটা সোজা রেখো’, উচ্চমাধ্যমিকে চতুর্থ স্থানাধিকারী প্রেরণাকে ফোন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের, জানালেন শুভকামনাও

‘এই দুর্নীতিতে ভরা বাংলা আমার রাজ্য নয়’, শিক্ষা দুর্নীতি নিয়ে এমনই মন্তব্য করেছিলেন চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিকে চতুর্থ স্থানাধিকারী গাইঘাটার প্রেরণা পাল। তাঁর সেই মন্তব্য কার্যত ভাইরাল হয়ে যায়। তা নিয়ে অনেক আলোচনা, পর্যালোচনা হয়েছে পরবর্তীতে। ব্যক্তিগত আক্রমণেরও শিকার হয়েছেন প্রেরণা ও তাঁর মা-বাবাও। এবার সেই কৃতি ছাত্রীকেই ফোন করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
জানা গিয়েছে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রেরণার বাবা তথা ইছাপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোক পালের থেকে প্রেরণার ফোন নম্বর নেন। এরপর নিজেই তিনি ফোন করেন প্রেরণাকে। কী বললেন বিচারপতি এই কৃতিকে?
প্রেরণা জানাচ্ছেন, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে বলেছেন, “মেরুদণ্ডটা এইরকমই সোজা রেখো”। ভবিষ্যৎ শিক্ষা নিয়ে শুভ কামনাও জানিয়েছেন বিচারপতি। প্রেরণা বলেন, “বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আইনি ব্যবস্থার মধ্যে থেকে দুর্নীতিকে পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি যা বলেন বা নির্দেশ দেন সেগুলি এই সমাজব্যবস্থার জন্য মঙ্গলের। আমি তাঁর ফোন পেয়ে আপ্লুত। ভাবতেই পারছি না এমন একজন মানুষ আমার সঙ্গে কথা বলেছেন”।
প্রেরণার বাবা অশোক পাল ইছাপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক,। সেই স্কুল থেকেই উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছিলেন প্রেরণা। তাঁর মা-ও স্কুল শিক্ষিকা। শিক্ষা দুর্নীতি নিয়ে মন্তব্য করার পর শুধুমাত্র প্রেরণাই নয়, তাঁর মা-বাবাকেও আক্রমণের শিকার হতে হয়। তবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ফোন পাওয়ার পর প্রেরণা জানাচ্ছেন, “এখন আর কোনও কটূ কথা, সমালোচনা, নোংরা মন্তব্য গায়ে লাগছে না। মনে হচ্ছে, সত্যিটা বললে তো এরকম হবেই”।
এই বছর উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশের পর পরীক্ষায় প্রথম হওয়া শুভ্রাংশু সর্দার থেকে শুরু করে চতুর্থ হওয়া প্রেরণা পাল- সকলেই রাজ্যের শিক্ষা দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তারা বলেছিলেন, স্কুল বুনিয়াদি শিক্ষা জায়গা। শিক্ষক-শিক্ষিকারাই মানুষ গড়ার কাজ করেন। কিন্তু সেই জায়গাটাই যদি ধাক্কা খায়, তাহলে মানুষ গড়ার প্রক্রিয়াই তো ধাক্কা খাবে।
কৃতিদের এমন সব মন্তব্য শুনে অনেকেই এর সমালোচনা করেছিলেন বটে। তবে সমাজের একটা বড় অংশের তরফে সমর্থনও পেয়েছেন তারা। অনেকের মতেই, যারা পরের বার ভোট দেবে, সমাজ সম্পর্কে তাদের নিজেদের মতামত পেশ করার অধিকার অবশ্যই রয়েছে। আর এরই মধ্যে এবার প্রেরণাকে ফোন করেও বাহবা জানালেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।