ছাত্রীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন, ধ’র্ষ’ণের চেষ্টা, অভিযোগ পেয়েই বিশ্বভারতীর সেই অধ্যাপককে গ্রেফতার করল পুলিশ, জেল হেফাজত

বিশ্বভারতীর বিনয় ভবনের শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক রাজর্ষি রায়ের বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলছিলেন এক মহিলা গবেষক। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। বিচারের জন্য তাই শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই গবেষিকা। তাঁর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ওই অধ্যাপককে গ্রেফতার করে পুলিশ। বোলপুর আদালতের নির্দেশে ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়েছে অভিযুক্তর।
জানা গিয়েছে, গপিএইচডি করার জন্য ২০১৫ সালে বিশ্বভারতীর বিনয় ভবনে ভর্তি হন ওই গবেষিকা। বর্তমানে অধ্যাপনাও করছেন তিনি। ভর্তির চার বছরের মধ্যে গবেষণার কাজ শেষ করে চূড়ান্ত উপস্থাপনার ব্যবস্থা করার জন্য তিনি তাঁর গাইড অধ্যাপক রাজর্ষি রায়কে অনুরোধ করেন।
কিন্তু এই অনুরোধের বিনিময়ে অশালীন দাবীর মুখোমুখি হন ওই গবেষিকা। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও গবেষক বা গবেষিকার কোনও অন্তত দু’টি গবেষণাপত্র তাঁর গাইডের কোনও সেমিনারে উপস্থাপিত করা ও তা যাতে প্রকাশিত হয়, তার ব্যবস্থা করার কথা। ওই গবেষিকা জানান, তাঁর গাইড তাঁকে চাপ দিতে থাকেন যাতে তিনি তাঁর সঙ্গে অন্য কোনও রাজ্যে বা বিদেশে কোথাও যান।
এই বিষয়টি জানাজানি হওয়ার ভয়ে অধ্যাপক গবেষিকাকে চরম অসহযোগিতা করতে শুরু করেন এবং রীতিমত ভয় দেখান যে তার ভবিষ্যৎ জীবন নষ্ট করে দেবেন বলেও হুমকি দিতে থাকেন। এমন অবস্থায় ২০২২ সালের শুরুতে ঐ গবেষিকা শিক্ষা বিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধানের কাছে অভিযোগ করেন। ২০২২ সালের জুন মাসে ওই গাইডের বিরুদ্ধে বিভাগীয় প্রধানকে লিখিতভাবে জানান গবেষিকা। তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর বেণুধর চিনারা কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে লিখিত অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেয় গবেষিকাকে।
সেই কারণে বাধ্য হয়ে গত বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতন থানায় ওই গবেষিকা লিখিত অভিযোগ জানান। প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ওই অভিযোগকারিণী এই বিষয়ে। গবেষণার ছাত্রীর নির্যাতনের প্রতিবাদে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শান্তিনিকেতনে বিক্ষোভও দেখায় পড়ুয়াদের একাংশ। নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে ৩৫৪, ৩৫৪এ, ৩৫৪বি, ৩৫৪ডি, ৫০৪, ৫০৯, ৫০০, ৩৭৬, ৫১১ ধারায় মামলা রুজু করে শান্তিনিকেতন থানা। গত শুক্রবার বোলপুর আদালত নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করে। গ্রেফতারির পর আজ, রবিবার বোলপুর আদালতে তোলা হয় ওই অভিযুক্ত অধ্যাপককে।