টাকার সমস্যায় হাপিত্যেশ করছে রাজ্য সরকার, উন্নয়ন থেকে দৈনন্দিন খরচ সবেতেই পড়ল কোপ, নবান্নের ভাঁড়ার শূন্য, ভরসা কেন্দ্রের টাকাতেই

বড়সড় সমস্যার মুখে পড়েছে মমতা সরকার। খেলা, মেলা, খয়রাতি, উৎসব করে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে কিন্তু এদিকে রাজ্যের আয় নেই। সেই কারণে বাধ্য হয়েই এবার নানান খরচে কোপ বসানোর পালা শুরু রাজ্য সরকারের। অর্থ দফতরের তরফে জানানো হ্যেচজে যে বেতন ছাড়া বাকি সমস্ত খরচে এবার লাগাম টানতে হবে। বাজেটে বড় বড় ভাষণ শোনা গেলেও ১০ই জুলাই নির্দেশিকা জারি করে সরকারের তরফে জানানো হয় যে শুধুমাত্র বেতন ছাড়া বাকি সবকিছুর উপর সারাবছর ধরেই পড়বে কোপ।
২০২২-২৩ অর্থবর্ষের চারমাস কেটে গিয়েছে। বছরের শুরুতেই নানান খরচের উপর কাটছাঁট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নবান্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী, অনেকেই ভেবেছিলেন যে হয়ত প্রথম ত্রৈমাসিকের পর খরচের লাগাম কিছুটা হালকা হবে। তবে এবার সরকারের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হল যে গোটা বছরই খরচের উপর রাশ টানতে হবে। বাজেটে বেতন ও পেনশন খাটে যে টাকা ধরা রয়েছে, তা বাদে আর কোনও খরচ নয়। রাজ্যের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রশাসনিক খরচ থেকে কোনও খরচ করা যাবে না।
অর্থ মন্ত্রকের কথায়, এবছরের বাজেটে ১ লক্ষ ২৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সেই টাকার ২০ শতাংশই জোগাড় করা সম্ভব হয়েছে। এই কারণে নানান দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে বাজেটে যে পরিমাণ অর্থ উন্নয়নের জন্য ধরা হয়েছে, তার ২০ শতাংশের বেশি যাতে খরচ না হয়। এর বেশি খরচ হলে তার দায় অর্থ দফতরের যে নয়, তাও সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
প্রশাসনিক খরচের উপরও পড়েছে কোপ। বেতন ও উন্নয়নের বাইরে সবথেকে বেশি খরচ হয় প্রশাসনিক ক্ষেত্রে। সরকারি গাড়ি ঘোড়া, ইলেকট্রিক বিল, সরকারি অনুষ্ঠানসহ নানা খাতে ৫৮টি দফতরের প্রশাসনিক খরচ বাবদ বাজেটে ১ লক্ষ ৬৪ হাজার কোটি টাকা ধরা রয়েছে। অর্থ দফতর নির্দেশ দিয়েছে যাতে বাজেট বরাদ্দের ৫০ শতাংশ টাকাতেই গোটা বছরের সরকারের সংসার চালিয়ে নেওয়া হয়। এক দফতরের সচিবের কথায়, সংসার চালানোর খরচ যদি ৫০ ভাগ কমিয়ে দেওয়া হয় তা হলে কি আর সংসার ঠিকঠাক চলে! এক সরকারি কর্তার কথায়, “মন্ত্রীমশাইয়ের বাথরুম সারাই করতেই তো অনেক সময় দেড় কোটি টাকার বেশি খরচ হয়, সেই ফাইল যদি নবান্ন পাঠিয়ে অনুমোদন নিয়ে আসতে হয় তা হলে সরকার কেমন চলছে বোঝাই যাচ্ছে”।
গত চার মাসে ২২টি দফতরের আরআইডিএফ প্রকল্পে ৫৩৪ কোটি টাকা দিয়েছে রাজ্য সরকার। এবার মোদী সরকারের টাকার জন্য অপেক্ষা মমতা সরকারের। কেন্দ্র টাকা পাঠালে, তবেই ফের উন্নয়ন হবে রাজ্যে। ইতিমধ্যেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে সতর্ক করা হয়েছে বাংলার সরকারকে। বলা হয়েছে খয়রাতি যদি বন্ধ না করা হয়, তাহলে বাংলার অবস্থাও শ্রীলঙ্কার মতোই হবে।