‘আমার ঠিকানা তাই…’! মা-কে বাড়ি থেকে বের করে পাকা বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখে বাস ছেলের, বৃদ্ধা মা-র ঠাঁই গাছের তলা

‘আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম’। নচিকেতার এই গানটার সঙ্গে অল্পবিস্তর আমরা সকলে পরিচিত। এই গানের গল্প অনুযায়ী ছেলেকে বড় মানুষ করার পর মায়ের ঠিকানা হয়েছিল বৃদ্ধাশ্রম। এই গানের সঙ্গে বাস্তবের মিল যে ঠিক কতটা, তা আর বলার দরকার পড়ে না আলাদা করে। বাস্তবেও এমন ঘটনা আকছার ঘটছে আমাদের চারিপাশে। দিকে দিকে তাই এত বৃদ্ধাশ্রমের ছড়াছড়ি। এরই মধ্যে উঠে এল আরও এক বৃদ্ধার মায়ের হৃদয়বিদারক কাহিনী।
না, এক্ষেত্রে মায়ের স্থান বৃদ্ধাশ্রমে হয়নি, হয়েছে সোজা গাছের তলায়, খোলা আকাশের নীচে। অথচ বৃদ্ধার ছেলে নিজের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিব্য রয়েছেন পাকাবাড়িতে। কিন্তু সেই বাড়িতে জায়গা নেই ৮০ বছরের বেশি বয়সী মায়ের। এমনই ঘটনা ঘটল পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের ৬ নম্বর ব্লকে।
কী ঘটেছে ঘটনাটি?
জানা গিয়েছে, ওই অঞ্চলের বাসিন্দা গায়েত্রী প্রামাণিক। তাঁকে তাঁর ছেলে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। ফলে এখন সেই বৃদ্ধার ঠিকানা হয়ে দাঁড়িয়েছে গাছের তলা। বৃদ্ধার কথায়, তাঁর শ্বশুরের ভিটেতে এখন তাঁর ছেলে-বৌমা থাকে। পুরসভা থেকে পাকাবাড়ি করে দেওয়া হচ্ছে। বাড়ির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। আর এরপরই মা-কে বাড়ি থেকে বের করে দেয় ছেলে, মহিলার এমনটাই দাবী।
স্থানীয়দের কথায়, ওই বৃদ্ধা বছর খানেক আগে পাড়ারই এক প্রতিবেশীর বাড়ি আশ্রয় চান। সেই বাড়ির একতলাতে ইটে ঘেরা এক ঘরে থাকা শুরু করেন তিনি। সঙ্গে ছিল ওই বৃদ্ধার এক মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেও। এক বছর ধরে সেখানেই ছিলেন তিনি। অন্য ছেলে পাকাবাড়ি করছে কিন্তু মা-কে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
কিন্তু এখন সেই প্রতিবেশীর বাড়িতেও আর জায়গা হচ্ছে না বৃদ্ধার। সেই কারণে সেই মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে নিয়ে গাছের তলাতেই দিন কাটাচ্ছেন বৃদ্ধা।
কী জানাচ্ছেন বৃদ্ধার ছেলে?
এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন বৃদ্ধার ছেলে। তাঁর কথায়, তাঁর এখন পাকাবাড়ি হচ্ছে। সেই কারণে মা-কে কিছুদিনের জন্য অন্য জায়গায় থাকতে বলেছেন তিনি। কিন্তু তিনি যে দিব্য নিজের পরিবার নিয়ে সেই তৈরি হওয়া বাড়িতেই থাকছেন, তার বেলা? তাহলে বৃদ্ধা মায়ের কেন জায়গা হল না সেই জায়গায়?
এই প্রশ্নের অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি ছেলের কাছে। তবে তিনি জানান যে বাড়ি হয়ে গেলে মাকেও ফিরিয়ে আনবেন তিনি। এও জানান যে তিনি তার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন নি, তিনি নিজেই বেরিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তার মা যে গাছের তলায় থাকছেন, তা কী ছেলে জানেন না? ছেলে উত্তরে জানান, এতদিন তাঁর মা পাড়ার এক লোকের বাড়িতে থাকছিলেন। কিন্তু সেখানে আর থাকা সম্ভব নয়, তাই একদিন গাছের তলায় কাটিয়েছেন। কিন্তু এরপর কোথায় যাবেন তার মা? সে উত্তরও মেলেনি ছেলের থেকে।