‘দল নেতাজির আদর্শ পূরণ করেনি, কোনও প্রতিশ্রুতি রাখে নি’, ক্ষোভ উগড়ে বিজেপি ছাড়লেন নেতাজির নাতি চন্দ্র বসু

বিজেপি ছাড়লেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নাতি চন্দ্র বসু। আজ, বুধবার বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে চিঠি দিয়ে নিজের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। তাঁর অভিযোগ, বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি আশা করেছিলেন যে দল নেতাজির স্বপ্ন, আদর্শ পূরণ করবে। কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন চন্দ্র বসু। ২০১৬ সালের বিধানসভা এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি বিজেপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন। এদিন চন্দ্র বসু বলেছেন, “বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সময় আমায় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং শরৎচন্দ্র বসুর অন্তর্ভুক্তিমূলক আদর্শ প্রচার করতে দেওয়া হবে। কিন্তু সেরকম কিছুই হয়নি”।
আর কী জানান চন্দ্র বসু?
তাঁর কথায়, “২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলাম। সকলকে একসঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলার যে আদর্শ ছিল বোসদের মধ্যে, সেটাই বিজেপির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। এমনকি নেতাজির আদর্শ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিজেপির মধ্যেই আজাদ হিন্দ মোর্চা শুরু করারও কথা ছিল। কিন্তু এখনও সেসব কিছুই হয়নি”।
নিজের এই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে চন্দ্র বসু জানান, “২০১৬ সাল থেকে আমি বিজেপিতে অবদান রেখেছি। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। আমার নীতিগুলি আমার দাদু শরৎচন্দ্র বসু এবং তাঁর ছোট ভাই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তাঁরা দেশের প্রত্যেক ধর্মের মনুষকে দেখেছিলেন শুধুমাত্র ভারতীয় হিসেবে। বিভাজন ও সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন তাঁরা। আমি বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে বাংলায় রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তাঁরা সেগুলি দরকারি মনে করলেও, কখনও আমার প্রস্তাবগুলির বাস্তবায়িত করেননি। যখন আমার কোনও প্রস্তাবই গৃহীত হয় না, তখন এই দলের সঙ্গে থাকার কোনও মানে হয় না। আমি কাজ করতে পারছি না। তাই ভেবে দেখলাম, এই দলের সঙ্গে থাকাটা নেতিবাচক কাজ। আমি জেপি নাড্ডাকে বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছি। আমার শুভকামনা দলের সঙ্গে রইল। তবে তাদের উচিত সমস্ত সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করা”।
কী প্রতিক্রিয়া বিজেপির?
চন্দ্র বসুর পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন দীর্ঘ সময় ধরেই চন্দ্র বসুর দলের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না। কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “কোথায় চন্দ্রযান চাঁদে পৌঁছে যাচ্ছে, আর আপনারা চন্দ্র বসুকে নিয়ে পড়ে আছেন। তিনি দলে ছিলেন কবে? এতদিন থেকেও ছিলেন না। এবার দলে না থেকে থাকবেন না”।
বলে রাখি, বেশ কয়েকদিন আগেও কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাত হয় চন্দ্র বসুর। দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে বসানো নেতাজির মূর্তির আদলের বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। ইন্ডিয়া গেটের ক্যানোপিতে নেতাজির স্যালুট ভঙ্গিমার মূর্তি বসাচ্ছে মোদী সরকার। যেখানে স্যালুট করার ভঙ্গিমাতে দাঁড়িয়ে থাকবেন নেতাজি। সেই নিয়েই আপত্তি জানিয়েছিল বসু পরিবার।