রাজ্য

তিন বছরে বাংলার মাটিতে শক্ত হয়েছে পদ্মের শিকড়! বিজেপি-র ভোট ৮.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৬.৩১ শতাংশ

২রা মে কি ফলাফল জানাবে বাংলার জনতা তা জানেনা বাংলার কোন‌ও রাজনৈতিক দলই। সমীক্ষা বলছে সরকার গড়তে পারে তৃণমূল। কিন্তু সেই ক্ষেত্রেও খুব একটা স্বস্তির জায়গায় নেই শাসকদল। কারণ দুর্নিবার গতিতে আসছে বিজেপিও। আর এই ভোটে সবথেকে বড় ভূমিকা নেভাতে চলেছে সাইলেন্ট ভোটাররা। অর্থাৎ যাঁরা রাজনীতিতে ইন্টারেস্ট নেই, কাকে ভোট দেবো জানিনা বলে প্রকাশ্যে সরে যান। তাঁরাই এবার বাজি পাল্টাতে পারেন।

আরও পড়ুন- প্রচারে বেরিয়ে বিপত্তি, যশকে কাছে পেয়েই জড়িয়ে ধরে চুম্বনে ভরিয়ে দিলেন মহিলা অনুরাগী, তারপর? 

কাল থেকে বাংলায় শুরু হচ্ছে ভোটের মহাযুদ্ধ। শনিবার প্রথম দফা। তারপর আর‌ও সাত দফা। আপাতদৃষ্টিতে লড়াই ত্রিমুখী হলেও এই ভোটে রাজ্যের শাসকদলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। তাদের তুলনায় অনেকটাই পিছনে পায়ে বাম-কংগ্রেস-সিদ্দিক জোট। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফেরা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। তাঁর দাবি, বাম-কংগ্রেসের ভোট ভাঙিয়েই রাজ্যে ঘাঁটি গাড়তে সক্ষম হয়েছিল বিজেপি। তাই তাঁদের ভয়ের কিছু নেই।

কিন্তু চোখে পড়ার মতো বিষয় হাতে গোনা কয়েকটা বছর আগে পর্যন্তও বাংলার রাজনীতি বলতে সিপিএম, কংগ্রেস এবং তৃণমুলকেই জানত বঙ্গবাসী। বিজেপি নামক এই দলটা কার্যত অস্তিত্বহীন ছিল বাংলায়।  কিন্তু সমীকরণ বদলেছে হঠাৎই তীব্রগতিতে উঠে এসেছে বিজেপি।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের থেকে তিন বছরে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি-র ভোট বেড়েছিল ৩৮ শতাংশ। বিধানসভাতেও গেরুয়া শিবিরের সেই উত্থান তিনি রুখতে পারবেন কি না, মমতার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ সেটাই।

আরও পড়ুনWB Election 2021: ‘ঝাঁটা নিয়ে আয় তো’, দশ বছরে কোনও কাজ করেনি, ভোট প্রচারে গিয়ে জনগণের ক্ষোভের মুখে তৃণমূল মন্ত্রী অসীমা পাত্র

তবে বিজেপি-র এই উত্থান যে ‘রাতারাতি’ হয়নি, তা বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাবে। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে প্রধান বিরোধীদল হয়ে ওঠাই লক্ষ্য ছিল বিজেপি নেতৃত্বের। কিন্তু সেই লক্ষ্যপূরণের অনেক আগেই থেমে যেতে হয়েছিল তাঁদের। খড়্গপুর সদর, মাদারিহাট এবং বৈষ্ণবনগর— বিধানসভায় মাত্র তিনটি আসন পেয়েছিল তাঁরা। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলার রাজনৈতিক সমীকরণের অনেকটাই পাল্টে যায়। ২০১৯-এ ১৮টি লোকসভা আসনে জয়লাভ করে বিজেপি। শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গে তাদের আসনের ব্যবধান ছিল মাত্র ২। সেখান থেকেই বাংলায় ‘গেরুয়া দাপটের’ সূত্রপাত।

তবে গিয়ে দিবস শিবিরের এই উত্থানকে আমল দিতে নারাজ ঘাসফুল শিবির।  তাঁদের বক্তব্য কেন্দ্রীয় নির্বাচনে কোনও দল ভাল ফল করলে রাজ্যের নির্বাচনেও তাঁরা ভাল ফল করবে, এমনটা বলা যায় না।

২০১৬-এর বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধানও কিন্তু বেশ ‘চমকপ্রদ’। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম দফার এই ৩০টি কেন্দ্রে মোট ৫৬,৯৩,৬১৫টি ভোট পড়েছিল। তৃণমূল পেয়েছিল ২৮,৬৯,০৯১টি ভোট। অর্থাৎ মোট ভোটের ৫০.৩৯ শতাংশ। সে বার বামেরা পেয়েছিল ১৫,৯৭,৮২১টি ভোট অর্থাৎ মোট ভোটের ২৮.০৬ শতাংশ। বিজেপি-র প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪,০৮৯,৫৯৪। অর্থাৎ মোট ভোটের মাত্রই ৮.৬ শতাংশ। ৩,৪২,৩২৩টি ভোট পেয়েছিল কংগ্রেস। যা ছিল মোট ভোটের ৬.০১ শতাংশ । কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে সেই সমীকরণ আমূল বদলে যায়। সে বার এই ৩০টি কেন্দ্রে মোট ৫৯,৭৮,৬৬৮টি ভোট পড়ে। তাতে তৃণমূল-কে টপকে প্রথম স্থানে পৌঁছে যায় বিজেপি। সে বার ২৭,৬৮,৭২৭টি ভোট পায় বিজেপি। অর্থাৎ মোট ভোটের ৪৬.৩১ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তৃণমূলের সে বার প্রাপ্ত ভোট ছিল ২৫,১১,৩৭৬ অর্থাৎ ৪২.০১ শতাংশ। সেই তুলনায় বাম এবং কংগ্রেসের ভোট কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩,০৯,৩৬৫ এবং ১,৩০,৫৪৭। অর্থাৎ বাম এবং কংগ্রেস সে বার মাত্র ৫.১৭ এবং ২.১৮ শতাংশ করে ভোট পেয়েছিল।

অর্থাৎ, মাত্র তিন বছরের মধ্যে বিজেপি-র ভোট ৮.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৬.৩১ শতাংশ হয়েছে। তার পিছনে ‘বাম-রাম’ যোগসাজস রয়েছে বলে একাধিক বার কটাক্ষ করেছে তৃণমূল।

প্রসঙ্গত, শনিবার প্রথম দফায় রাজ্যের পাঁচটি জেলার যে ৩০টি আসনে ভোট হতে চলেছে, আগের তুলনায় সেখানে বিজেপি-র শিকড় বেশ মজবুত বলেই প্রাথমিক অঙ্ক বলছে। কারণ, শনিবার পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম— এই পাঁচ জেলার যে ৩০টি আসনে ভোটগ্রহণ, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে সেখানে একটিতেও জয়লাভ না করলেও ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ওই বিধানসভা কেন্দ্রগুলির মধ্যে ২০টিতেই এগিয়ে ছিল বিজেপি। তৃণমূল এগিয়ে ছিল মাত্র ১০টিতে। অথচ ২০১৬-র পরিসংখ্যান বলছে, ওই ৩০টি আসনের ২৭টিতে জয়লাভ করেছিল তৃণমূল। দু’টি আসনে পেয়েছিল কংগ্রেস এবং একটি আসন পেয়েছিল বামশরিক আরএসপি। সে বার ওই ৩০টি আসনের একটিতেও বিজয়ী হয়নি বিজেপি।

Back to top button
%d bloggers like this: