নেতাদের দুর্নীতির কেচ্ছা ধামাচাপা দিতেই কী ক্লাবগুলিকে পুজোয় ২৫৮ কোটি টাকার অনুদান, তৃণমূলের বিরুদ্ধে কটাক্ষ বিরোধীদের

রাজ্যের ঘাড়ে এখন প্রবল ঋণের দায়। ঋণ ছাড়িয়েছে প্রায় ৬ লক্ষ কোটি। একদিকে যখন রাজ্য সরকার বরাদ্দের ক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকারের বঞ্চনার অভিযোগ তুলছে, ঠিক সেই সময় সেই রাজ্য সরকারই পুজোয় ৪৩ হাজার ক্লাবকে ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান ও বিদ্যুতের বিলে ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার ঘোষণা করেছে। এই নিয়ে স্বভাবতই বেশ বিতর্ক ছড়িয়েছে।
বিরোধীদের কথায়, আগামী বছর রয়েছে পঞ্চায়েত ভোট। এরই মধ্যে তৃণমূলের একাধিক নেতা নানান দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। গ্রেফতার হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনুব্রত মণ্ডল। নেতাদের সেই কেচ্ছাকে ধামাচাপা দিতেই ক্লাবগুলিকে এই অনুদান দেওয়ার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটবাক্স জিইয়ে রাখতে এটাই মমতার ত্রুপের তাস।
একদিকে যখন আর্থিক সংকটের জেরে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ কমিয়ে ৩১ শতাংশ করা হয়েছে, সেই সময় দাঁড়িয়ে পুজোয় ক্লাবগুলিকে অনুদানের জন্যব ২৫৮ কোটি টাকার খয়রাতির বিষয়টি মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না কেউই। বিরোধীরা তো বটেই, এই নিয়ে সরব হয়েছেন সরকারি কর্মীরাও।
সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এই বিষয়ে বলেন, “বিপুল লুঠ, বেকারি থেকে চোখ সরাতেই সরকারের এই আয়োজন। ধর্মীয় উৎসবকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি। এভাবে বাংলার মানুষকে সঠিক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রেখে আমোদ, নেশায় ডুবিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে”। তিনি আরও বলেন, “এভাবে জলের দরে টাকা বিলি হচ্ছে অথচ সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য ডিএ থেকে বছরের পর বছর বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে”।
পুজোয় ক্লাবগুলিকে এত টাকার অনুদান দেওয়ার বিষয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ শানিয়ে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূলের সরকারের কেলেঙ্কারি এখন আর কারও অজানা নয়৷ চারিদিকে শুধু দুর্নীতি আর দুর্নীতি৷ তবে শত চেষ্টা করেও ওরা আর মানুষের রোষ থেকে বাঁচবে না”। তিনি আকারে-ইঙ্গিতে এও বুঝিয়ে দেন যে এই সরকারের শেষ সময় চলে এসেছে।
অন্যদিকে, সরকারের এই অনুদানের বিষয়ে সরব হয়েছেন সরকারি কর্মচারীদের বামপন্থী সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা বিজয়শঙ্কর সিংহও। তিনি বলেন, ‘‘সরকার যেভাবে উৎসব, মোচ্ছব, ফূর্তি আর কার্নিভাল নিয়ে মেতে আছে তা সরকারি কর্মচারী-বিরোধী সিদ্ধান্তের সামিল৷ এর প্রতিবাদে এখন থেকেই বড়সড় আন্দোলন হবে”। তিনি জানান যে আগামী ৩০শে আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করে সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাবেন তারা।
পুজোয় সরকারি অনুদানের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তৃণমূল সমর্থিত সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা মনোজ চক্রবর্তীও৷ কিছুটা সাবধানীভাবে তিনি বলেছেন, “রাজ্যের উন্নয়নে সরকারি কর্মচারিদের ভূমিকা অনস্বীকার্য৷ ফলে তাঁদের এভাবে বঞ্চনা করা ঠিক নয়৷ এটা রাজ্য সরকারের ভাবা উচিত”। তবে শাসকদলের কোনও নেতার থেকে এই বিষয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।