রাজ্য

দুর্ঘটনায় মৃত্যু পড়ুয়ার, পরিবারের ইচ্ছেতেই অঙ্গদানের মাধ্যমে সাত জনের শরীরে বেঁচে থাকবে নীল

পয়লা এপ্রিল। স্কুটি নিয়ে কলেজে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় নীল। আর বাড়ি ফেরা হয়নি। বাড়ি পৌঁছল তাঁর নিথর দেহ। সেদিন রাতেই একজনকে বাঁচাতে গিয়ে উল্টে যায় নীলের স্কুটি। প্রথমে তাঁকে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে দু’টি হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও দুর্ঘটনার গুরুত্ব বুঝে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে।

তবে শেষরক্ষা হয়নি। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ে হার মানে নীল। শুক্রবার সকালেই চিকিৎসকরা নীলের বাবাকে জানিয়ে দেন তৈরি থাকতে। যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাতে ব্রেন ডেথ সময়ের অপেক্ষা। চিকিৎসকদের আশঙ্কা সত্যি করেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ব্রেন ডেথ হয় বাঁকুড়া কলেজের পদার্থবিদ্যার পড়ুয়ার। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন তাঁর মা। তার মধ্যেই পাশের বাড়ির দেবাশিসকে তিনি বলেন যে এমন কিছু করা হয় যাতে নীল সবসময় তাদের সঙ্গেই আছে, তা তারা বুঝতে পারেন।

এরপরই মরণোত্তর অঙ্গদানের জন্য যোগাযোগ করা হয় হাসপাতালে। জানা গিয়েছে, ঘাটালে প্রথম নীলেরই মরণোত্তর অঙ্গদান হল। গত শনিবার সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে শুরু হয় নীলের মৃতদেহ থেকে এক এক করে অঙ্গ তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া। এক এক করে নেওয়া হয় হার্ট, দুটো কিডনি, লিভার, দুটো ফুসফুস, এবং পেটের চামড়া-সহ অন‌্য কিছু অংশ।

এই অঙ্গের মধ্যে পেটের কিছু অংশ আর ফুসফুস সেদিন বিকেলেই চলে যায় চেন্নাই এম জি এম হাসপাতালে। সেখানে দুই মুমূর্ষু রোগীর দেহে তা প্রতিস্থাপন করা হবে। অ‌্যাপোলো হাসপাতালের এক রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হবে লিভার। দু’টি কিডনির একটি পাবেন কমান্ড হাসপাতালের এক রোগী, অপরটি অ‌্যাপোলো হাসপাতালের এক রোগী পাবেন।

নীলের হার্ট পাঠানো হয়েছে কলকাতারই মেডিকা হাসপাতালে। এক সঙ্গে সাতটি অঙ্গ এর আগে কলকাতার কোনও হাসপাতালে ব্রেন ডেথ হওয়া দেহ থেকে নেওয়া হয়নি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, পরিবারের অনুরোধে নীলের চোখ নেওয়া হয়নি।

গত শনিবার বিকেলে ময়নাতদন্তের পর নীলের দেহ তুলে দেওয়া হয় তাঁর পরিবারের হাতে। একদিকে যখন নীলকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ তাঁর পরিবার, অন্যদিকে হয়ত তখন তাঁরই অঙ্গ নিজেদের শরীরে প্রতিস্থাপন করে সুস্থ হওয়ার আশায় প্রহর গুনছেন একাধিক মানুষ। এভাবেই তাদের শরীরের মধ্যে দিয়েই এবার বেঁচে থাকবে নীল।

Back to top button
%d bloggers like this: