রাজ্য

কাকতালীয় নাকি ভগবানের লীলা? শ্রাবণ মাসে শিবলিঙ্গ উচ্ছেদের নির্দেশ বিচারপতির, রায় লিখতে গিয়েই জ্ঞান হারালেন রেজিস্টার, রায়ে এল বিরাট বদল

বিতর্কিত জমি থেকে শিবলিঙ্গ উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। সেই রায় লেখার সময়ই অজ্ঞান হয়ে যান এজলাসে উপস্থিত সহকারী রেজিস্টার। এমন ঘটনায় সকলে স্তম্ভিত হয়ে যান রীতিমতো। এরপরই নিজের রায়ে বিরাট বদল আনেন বিচারপতি।

কী নিয়ে অভিযোগ?

বেশ কিছুদিন ধরেই একটি জমিকে কেন্দ্র করে বিবাদ চলছিল মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার খিদিরপুরের বাসিন্দা সুদীপ পাল ও গোবিন্দ মণ্ডলের মধ্যে। গত মে মাসে এই ঝগড়া হাতাহাতিতে পৌঁছয়। দু’জনেই একে অপরের বিরুদ্ধে বেলডাঙা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ উভয়ের বিরুদ্ধে মারামারি করার অভিযোগ এনে চার্জশিট পেশ করে। তবে নিম্ন আদালত থেকে তারা জামিন পেয়ে যান। কিন্তু বিবাদ শেষ হয়নি দু’পক্ষের।

সুদীপের অভিযোগ, কিছুদিন আগেই ওই বিতর্কিত জমির উপর একটি শিবলিঙ্গ স্থাপন করেন গোবিন্দ। সেই শিবলিঙ্গ তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সুদীপ। কিন্তু থানার তরফে জানানো হয় যে এই বিষয়ে যেহেতু ধর্ম জড়িয়ে রয়েছে, তাই তারা এঁটে হস্তক্ষেপ করবে না।

সেই কারণে পুলিশের নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সুদীপ। তাঁর দাবী, গোবিন্দ ইচ্ছাকৃতভাবে ওই জমিতে শিবলিঙ্গ স্থাপন করেছেন আর পুলিশ তাতে আমল দিচ্ছে না। তিনি আর্জি জানান যাতে বিচারপতি এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে শিবলিঙ্গটি সরানোর নির্দেশ দিন।

গতকাল, মঙ্গলবার সেই মামলারই শুনানি ছিল আদালতে। এদিন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত গোবিন্দ মণ্ডলের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, “কেন আপনি বিতর্কিত জমিতে শিবলিঙ্গ স্থাপন করেছেন? বিচারাধীন সম্পত্তিতে শিবলিঙ্গ প্রতিস্থাপন করা কি যায়”? এর জবাবে আইনজীবী মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় সওয়াল করেন যে তাঁর মক্কেল শিবলিঙ্গ প্রতিস্থাপন করেননি। শিবলিঙ্গ নিজেই মাটি ফুঁড়ে উঠেছে। যদিও সেই দাবী বিচারপতির কাছে ধোপে টেকেনি।

কী নির্দেশ দেন বিচারপতি?

এদিন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত বলেন যে বিতর্কিত জমিতে শিবলিঙ্গ স্থাপন করা যায় না কারণ জমিটি এই মুহূর্তে বিচারাধীন। সেই শিবলিঙ্গটি সরানোর নির্দেশ দেন তিনি। সেই রায়ই নথিভুক্ত করছিলেন রেজিস্টার বিশ্বনাথ রায়। কিন্তু ঠিক সেই সময়ই হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যান তিনি। এরপরই এজলাসে হুলুস্থুল পড়ে যায়।  

ওই রেজিস্টারকে আদালতের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। এত শোরগোলের মধ্যে এজলাস ছাড়েন বিচারপতি। তবে কিছুক্ষণ বাদে ফিরে এসে তিনি জানান যে এই বিষয়ে আদালত আর কোনও হস্তক্ষেপ করবে না। শিবলিঙ্গ স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে নিম্ন আদালতে বিচার হবে। এই বলেই এই মামলার নিষ্পত্তি করেন বিচারপতি।  

চলছে শ্রাবণ মাস। দিকে দিকে এখন মহাদেবের ভক্তরা জল ঢালছেন শিবলিঙ্গে। ঠিক এমন সময় এমন একটি ঘটনা ঘটায় সকলেই একে ভগবানের লীলা বলছেন। শ্রাবণ মাসে শিবলিঙ্গ উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে দাবী অনেকের। তবে অনেকেই আবার বলছেন, এই ঘটনা কাকতালীয়। ওই রেজিস্টার আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন আর কাজের চাপেই অজ্ঞান হয়ে যান তিনি।

Back to top button
%d bloggers like this: