‘প্রশাসক হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা সমর্থন করি’, কুণালের সঙ্গে সাক্ষাতের পরই ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে উল্টো সুর শুভাপ্রসন্নের গলায়

বাংলায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। এই সিদ্ধান্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করে তোপ দেগেছিলেন চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন। এরই মধ্যে জানা গেল, শিল্পীর বাড়ি গিয়েছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। আর তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের পরই সম্পূর্ণ উল্টো সুর শোনা গেল শুভাপ্রসন্নের গলায়।
‘দ্য কেরালা স্টোরি’ বিতর্ক নিয়ে শুভাপ্রসন্ন এক সংবাদমাধ্যমে আগে বলেছিলেন, “এই ছবি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অহেতুক ছবিটিকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে ফেললেন মুখ্যমন্ত্রী”। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “এই সিদ্ধান্ত কোনও রাজনৈতিক সুবিধা দেবে না। বরং নিষিদ্ধ করে ছবিটাকেই গুরুত্ব দেওয়া হল। সেন্সর বোর্ড যখন ছাড় দিয়েছে, তখন প্রদর্শনে বাধা কোথায়”?
তিনি আরও বলেন, “কে কী বলেছেন, সেটা আমি বলতে পারব না। আমার যে বোধ তাতে মনে করি কোনও শিল্পকে নিষিদ্ধ করা উচিত নয়, কেরালা স্টোরির মধ্যে কিছুই ব্যাপার নেই, হয়ত ধর্মান্তরিত করার ব্যাপার দেখানো আছে। এমন ধর্মান্তরণ খ্রিস্টান হিন্দুকে করে, হিন্দু খ্রিস্টানকেও করে, এইরকম অনেক ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও একজন শিল্পী। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করি”।
তাঁর এহেন মন্তব্যের পর তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র শুভাপ্রসন্নকে ‘সুবিধাবাদী’ আখ্যা দিয়ে কড়া আক্রমণ করেন। এমনকি, তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ ফোন করেন শুভাপ্রসন্নকে। কুণাল জানান যে তিনি শিল্পীকে অনুরোধ করেছেন তাঁর যদি কিছু বলার থাকে, তাহলে তিনি যেন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন।
এরপর জানা যায়, গতকাল, বুধবার সন্ধ্যে ৭টার দিকে শুভাপ্রসন্নের বাড়ি যান কুণাল ঘোষ। এদিন শিল্পীর বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় কুণাল স্বীকার করেন নি যে এই বিষয়ে কোনও কথা তাদের মধ্যে হয়েছে বলে। তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান যে শুভাপ্রসন্নের বাড়িতে তাঁর আমন্ত্রণ ছিল। নানান বিষয়েই কথা হয়েছে দু’পক্ষের মধ্যে।
কুণালের কথায়, “শুভাদা সিনিয়র মানুষ এবং দীর্ঘদিন ধরে মমতাদির সঙ্গে রয়েছেন এবং পরিবর্তনের আন্দোলনে অনেক দিন আগে থেকে শুভদা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। ফলে আমার মনে হয় এটা নিয়ে খুব একটা বাড়তি ভুল বোঝাবুঝি নেই। কোনও একটা আঙ্গিক থেকে শুভাদা কোনও একটা কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি পুরোদস্তুর প্রশাসক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে। তিনি জানেন যে প্রশাসক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যখন এরকম ধরনের কোনও একটা স্পর্শকাতর বিষয়ে কেউ সমাজে ভেদাভেদ করতে চায়, তখন আপতদৃষ্টিতে দেখে যা মনে হয় তার বাইরেও প্রশাসককে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমার মনে হয় এই নিয়ে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূরত্ব সেই ধরনের বিতর্কের আর কোনও অবকাশ থাকছে না”।
তবে এদিন কুণালকে গেট পর্যন্ত এগোতে এসে শুভাপ্রসন্ন সুর বদলে বলেন, “যা বলেছি, সবটাই ব্যক্তিগত মতামত থেকে। শিল্পী হিসাবে আমি মনে করি, একটি ছবি নিষিদ্ধ করলেই আটকানো যায় না”। তিনি আবার এও স্পষ্ট করে দেন, “প্রশাসক হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার পাশেই আছি। সমাজকে ভাগ করার চেষ্টা হলে তো প্রশাসনকে কড়া সিদ্ধান্ত নিতেই হয়”।