রাজ্য

নাটকের মাধ্যমে রাজ্যের নিপীড়নের কাহিনী তুলে ধরার জের, নাট্যকর্মীকে তুমুল মারধরের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে

নাটকের মাধ্যমে রাজ্যের নিপীড়নের কাহিনী তুলে ধরতে চাইছিলেন তিনি। সেই কারণে মারধরের শিকার হতে হল নদিয়ার রাণাঘাটের এক নাট্য সংস্থার কর্ণধারকে। ওই নাট্যকর্মীর নাম নিরুপম ভট্টাচার্য। তিনি রাণাঘাটের বিনপুর এলাকার বাসিন্দা। শুধু মারধরই নয়, ওই নাট্যকর্মীর বাড়ি লাগোয়া রিহার্সালের ঘরও ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

গত সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ার গ্রুপে ওই নাট্যকর্মী লেখেন যে তৃণমূলের সমর্থকরা তাঁকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করেছে। তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, গত কয়েকদিন ধরে তাঁকে পাগল বলে দেগে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছে। তিনি এও জানান যে তাঁর মা-বাবাকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

ওই নাট্যকর্মী লেখেন, “আমার গায়ে হাত দেয় তৃণমূলের দুই পাড়ার নেতা। তারপর আমার বাবা মাকে অকথ্য ভাষা গালাগাল দেয়। ওরা হুমকির সুরে আমার বাবাকে হাত জোড় করে মিহি নরম গলায় বলে, জেঠু আমরা বলছি তোমার পাগল ছেলের এই ঘরের সমস্ত কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে। আমার বাবা, মা এবং আমার পরিবার নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে। কারণ তার হুমকির স্বরে বলে আমি নাকি পাগল, আমাকে অ্যাসাইলামে দিতে হবে। না হলে আমাকে রেলের তলায় ফেলবে। আমি যদি আমার সমস্ত কার্যকলাপ বন্ধ না করি। এরপরেও নানা কথা-সহ খিস্তি……। আমি এখন কি করব বুঝতে পারছি না। পরিবার-সহ আমি আশঙ্কিত”।

তাঁর সেই পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। জানা গিয়েছে, ভারভারা রাওয়ের ‘কসাই’ কবিতা অবলম্বনে একটি নাটক পরিবেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। সেখানে তুলে ধরা হয়েছে হাঁসখালি ধ’র্ষ’ণের ঘটনা। আর সেই কারণেই শাসক দলের লোকজন ভয় পেয়েছে। জানা গিয়েছে, রাত সাড়ে ১১টা থেকে ২টো পর্যন্ত মারধর করা হয়েছে ওই নাট্যকর্মীকে।

যদিও রাণাঘাটের অন্যান্য নাট্যকর্মীদের অনেকেই নিরুপম ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধেই কথা বলেছেন। রানাঘাটে প্রবীণ নাট্যকর্মী গোপাল মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “ওর বক্তব্যের মধ্যে রয়েছে দ্বিচারিতা। রানাঘাটে নাট্যচর্চা করতে গিয়ে নিরূপম ভট্টাচার্য মার খেয়েছেন, এই অভিযোগ সঠিক নয়। নিজেকে প্রচারের আলোয় আনার জন্যই নিরূপম ভট্টাচার্য এই ধরনের দু’রকম কথা বলছেন। এটা মিথ্যাচার”।

অন্যদিকে, এই বিষয়ে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য দেবাশিস কাহার বলেন, “নিরুপম ভট্টাচার্যকে আমরা বড়দা বলে ডাকি। কিন্তু সব সময় উনি একটু মানসিক সমস্যায় থাকেন। অযথা যার তার সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। সেদিন রাতের ৪১ মিনিটের সিসিটিভিতে সবটাই রেকর্ডিং করা আছে। সিসিটিভি ক্যামেরা দেখলেই বোঝা যাবে ওখানে কোন ঝামেলা অশান্তি হয়নি। আর যদি তাই হয়ে থাকে বা যাদের নাম উনি লিখেছেন সোশ্যাল মিডিয়াতে, তাহলে তো পাড়ার লোকজন ওনার পাশে থাকতেন। কিন্তু কেউ ওনার পাশে দাঁড়াননি। নাটক আমরা তুলে দিতে চাইছি বলে যে অভিযোগ উনি করেছেন, সেটাও ঠিক নয়। বরং নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য আমরা সহযোগিতা করে থাকি। উনি অনেকের কাছ থেকে চাঁদা তুলেই নাটক করেন। আমরা তার জন্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করি”।

Back to top button
%d bloggers like this: