বন্ধ হওয়ার পথে! কলকাতার রাস্তায় আর দেখা মিলবে না ঐতিহ্যবাহী ট্রামের, বড় সিদ্ধান্ত সরকারের, মন ভারাক্রান্ত ট্রামপ্রেমীদের

কলকাতার ঐতিহ্যবাহী পরিবহণের কথা উথলেই প্রথমেই মাথায় আসে হলুদ ট্যাক্সি, হাতে টানা রিক্সা, ঘোড়ার গাড়ি আর ট্রাম। পুরনো কলকাতায় এগুলিই ছিল যাতায়াতের মাধ্যম। তবে সময়ের সঙ্গে উন্নত হয়েছে তিলোত্তমা। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে তার গায়ে। আর কালের নিয়মে ধীরে ধীরে প্রায় অবলুপ্তির পথে এই চিরাচরিত যানগুলি।
এবার বোধ শহরকে বিদায় জানানো সময় এসেছে ট্রামের। হ্যাঁ, সেই ধীরগতির ট্রাম যে ধীরেসুস্থে কলকাতাবাসীকে এক গন্তব্য থেকে অন্য গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। জানা যাচ্ছে, কলকাতায় যে ট্রাম রুটগুলি অব্যবহৃত হয়ে রয়েছে, সেগুলিকে আর পুনরুজ্জীবিত করবে না রাজ্য সরকার। আর এরপরই এই সিদ্ধান্তকে রীতিমতো ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেছেন ট্রামপ্রেমীরা।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবহণ বিশেষজ্ঞ তথা সেন্টার ফর সাইন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের একজিকিউটিভ ডাইরেক্টর অনুমিতা রায় চৌধুরী। তাঁর কথায়, “শহরজুড়ে এখন যখন বৈদ্যুতিক যানবাহনকে সাদরে গ্রহণ করা হচ্ছে তখন কিভাবে আসল EV-কে বাতিল করে দেওয়া যেতে পারে? সমগ্ৰ বিশ্বজুড়েই নানান শহরে পরিবহণের সবচেয়ে জলবায়ু-বান্ধব মাধ্যম হিসেবে ফিরে আসছে ট্রাম। এমতাবস্থায়, এই জীবন্ত পরিবহণ ব্যবস্থাকে ‘মৃত’ ও ঐতিহ্যবাহী রুটে পরিণত করার কোনো মানেই হয় না”।
এই প্রসঙ্গে ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেবাশীষ ভট্টাচার্য বলেন, “এর আগেও ১৯৪৬-৫০ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় ট্রামের অবলুপ্তির প্রসঙ্গ সামনে আসে। কিন্তু এখন ফের বড় শহরগুলিতে ট্রামকে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে”।
বলে রাখি, যানজট সামাল দিতে ও রাস্তার পরিসর বাড়ানোর জন্য ট্রামের ট্র্যাকগুলির উপর বিটুমিনের আস্তরণ দেওয়া হচ্ছে। চারটি রুটকে ইতিমধ্যেই ‘হেরিটেজ রুট’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমানে শ্যামবাজার-এসপ্ল্যানেড, বালিগঞ্জ-টালিগঞ্জ, খিদিরপুর-এসপ্ল্যানেড ও গড়িয়াহাট-এসপ্ল্যানেড এই রুটগুলিতে ট্রাম চলাচল সচল রয়েছে।
পরিবহণ আধিকারিকদের তরফে জানানো হয়েছে যে ভবিষ্যতে যদি কোনও সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্রামের রুট ফের পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে সমস্যা হবে না। ট্রামের ট্র্যাকের উপর থেক বিটুমিনের আস্তরণ তুলে নিলেই ফের ট্রামের ট্র্যাক ব্যবহার করা সম্ভব।
তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তে ট্রামপ্রেমীদের মন কিন্তু বেশ ভারাক্রান্ত। যে জিনিস একবার চলে যায়, তা আর ফেরে না। তাই ফের যে বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্রামের রুট পুনরুজ্জীবিত হবে, তেমনটার আশা বড়ই ক্ষীণ। তবে এই ঐতিহ্যবাহী ট্রাম নিয়ে কত মানুষের মধ্যে ব্যক্তিগত কত স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে যা মনকে খারাপ করেই তোলে।