‘আসলে ভোটে জিতলে টাকাই টাকা, প্রচুর টাকার লেনদেন, সেই কারণেই এমন লড়াই’, পঞ্চায়েতে হিংসা নিয়ে পর্যবেক্ষণ বিচারপতি সিনহার

পঞ্চায়েত ভোটে একাধিক হিংসা, অশান্তির সাক্ষী থেকেছে বাংলা। নানা প্রান্ত থেকে নানান অভিযোগ। প্রাণ গিয়েছে ১৯ জনের। ভোট মিটলেও বাংলার মানুষ এখনও নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। পঞ্চায়েত ভোটে ভোট লুট সংক্রান্ত একটি মামলায় আজ, বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে পর্যবেক্ষণ জানালেন হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা।
কী আলোচনা হয় এদিন আদালতে?
এদিন আদালতে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, একটা-দু’টো নয়, শ’য়ে শ’য়ে প্রচুর ব্যালট পেপার বাইরে পড়েছিল। রিটার্নিং অফিসারের উদ্দেশ্যে বিচারপতির প্রশ্ন “আপনার সই করা ব্যালট পেপার কীভাবে বাইরে এল? আপনি এগুলো দেখেছেন? আপনি কাকে ইস্যু করেছিলেন”?
এর উত্তরে রিটার্নিং অফিসার বলেন, “ভোটের দিন এগুলো বাইরে দিতে হয় প্রিসাইডিং অফিসারকে”। বিচারপতি প্রশ্ন, “এটা যে অপব্যবহার হয়নি বা হবে না কি করে আপনি প্রমাণ করবেন”? রিটার্নিং অফিসারের দাবী করেন যে প্রিসাইডিং অফিসারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে বাইরে ব্যালট বেরতে পারে।
এরপরই বিচারপতির পালটা প্রশ্ন, “রিটার্নিং অফিসারের কোনও দায়িত্ব নেই? এই বুথে ভয়ের পরিবেশ ছিল”? রিটার্নিং অফিসারের কথায়, তেমন কোনও ভয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। প্রিসাইডিং অফিসারের নাম জানানোর কথা বলেন বিচারপতি। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ কোথায়, প্রশ্ন বিচারপতি সিনহার।
এরপরই মামলাকারীকে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “কখন এই ঘটনা ঘটল”? বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, “গণনার সময় এই ঘটনা ঘটেছিল। কমিশনের কাছে অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি”। একথা শোনার পর রিটার্নিং অফিসারের উদ্দেশে বিচারপতির পালটা প্রশ্ন, “গণনার সময় বিরোধী দলের কোনও এজেন্ট ছিলেন না? কোন সময় গণনা শুরু হয়? কখন প্রার্থীদের এজেন্ট ঢুকেছিলেন? কখন বেরিয়েছেন? সমস্ত প্রার্থীদের এজেন্ট সে সময় উপস্থিত ছিলেন”?
কী পর্যবেক্ষণ করেন বিচারপতি?
রিটার্নিং অফিসারের উত্তরে উষ্মাপ্রকাশ করেন বিচারপতি। কমিশনের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছেন, “অশান্তি ও মৃত্যুর ঘটনা যে ঘটছে সেটা কি কমিশন অস্বীকার করতে পারবে? একজন প্রার্থী ৫বছর ধরে কাজ করার পর জিততে এই ভাবে অশান্তি পাকাতে পারেন”? এ প্রশ্ন তুলে বিচারপতি নিজেই জবাবও বলেন, “আসলে প্রচুর টাকার লেনদেন। তাই ক্ষমতা দখলের জন্যই এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে”। বুথের ভিতর ও বাইরের সিসিটিভি ফুটেজ রেজিষ্টার জেনারেলের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি। সেই ভিডিও খতিয়ে দেখে রিপোর্ট জমা দেবে হাইকোর্টের বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং রেজিষ্টার জেনারেলের বিশেষজ্ঞ টিম। আগামী ২৬ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।