‘সাসপেন্ড করলে তো বেতনের একটা অংশ পেয়ে আরাম করবে, পুলিশ আর অভিযুক্তদের যোগসাজশ ভাঙতে হবে’, হাইকোর্টের ভর্ৎসনার মুখে রাজ্য পুলিশ

লোকে বলে, সরকারি চাকরি মানেই আয়েশের চাকরি। সাসপেন্ড করা হলেও বসে বসে ঠিকই বেতনের একটা অংশ পেয়েই যান অভিযুক্ত। সেই কারণে অনেক সময়ই সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী তোলে নানান মহল। এবার এই বিষয় নিয়েই কঠোর কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।
কী বলেন বিচারপতি?
আজ, বুধবার পূর্ব মেদিনীপুরের এক মামলায় পুলিশের গাফিলতি প্রসঙ্গে বিচারপতি বলেন, “পুলিশকর্মীদের সাসপেন্ড করে কী হবে? সরকারি চাকরিতে সাসপেন্ড করা মানে আরও আরামের ব্যাপার। সাসপেন্ড করা হলেও বেতনের একটা অংশ তাঁরা পাবে, আর অভিযুক্তদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বেআইনি কাজ করবে। পুলিশ এবং অভিযুক্তদের এই যোগসাজশ ভাঙতে হবে”।
এদিন বিচারপতি এও জানান যে পুলিশ কর্মীদের কড়া প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। তাঁর কথায়, “পুলিশ কর্মীদের আরও কড়া প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের আইপিসি এবং সিআরপিসি নিয়ে আরও পড়াশোনা করতে হবে। জেলার পুলিশ সুপারকে এবিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে”।
হঠাৎ কেন এমন মন্তব্য করেন বিচারপতি?
২০১৪ সালের একটি মামলায় চার্জশিট জমা দেওয়ার বিষয়ে অত্যন্ত দেরি করে পুলিশ। এই নিয়ে অভিযোগ ওঠে তমলুক থানার বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৮ জন তদন্তকারী আধিকারিককে বদলি করা হয়েছে। তা শুনে বিচারপতির প্রশ্ন, “তাহলে শুধু একজনকে সাসপেন্ড কেন করা হয়েছে? কেন একজন আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হবে”?
কোন মামলায় এমন মন্তব্য করেন বিচারপতি?
২০১৪ সালে তমলুক থানা এলাকায় মোবাইল টাওয়ার বসানো নিউটাউনের এক সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছিল। এই ঘটনার তদন্ত করে সেই সময় ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কিন্তু মামলার চার্জশিট অনেক দেরিতে জমা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। জানা গিয়েছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে নিম্ন আদালতে এই মামলার চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। কিন্তু দেখা যায়, সেই চার্জশিটে তারিখ রয়েছে ২০২২ সালের মার্চ মাসের। এরপরই কয়েকজন অভিযুক্ত কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।
সেই সময় আদালত নির্দেশ দেয় যে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে সশরীরে হাজির থাকতে হবে। সেই নির্দেশ মেনেই আজ, বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের শুনানিতে হাজির ছিলেন পুলিশ সুপার। বিচারপতির নির্দেশ, আইন মেনে যাতে নিম্ন আদালতে যাতে চার্জশিট পেশ করা হয়, তা নিশ্চিত করবেন রাজ্যের ডিজি।