রাজ্য

ট্রেন দুর্ঘটনায় কাটা গিয়েছে অর্ধেক শরীর, প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে দু’হাতে ভর দিয়েই জীবনের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দেবাশিস

কোমরের নীচ থেকে শরীরের বাকি অংশ আর নেই। ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে তা বাদ পড়েছে। কিন্তু জীবনযুদ্ধে থেমে যান নি তিনি। দু’টি হাতই তাঁর সম্বল। তাই সেই দুই হাতে ভর দিয়ে মনের জোর নিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন উত্তর ২৪ পরগণার নিউ ব্যারাকপুরের দেবাশিস সর্দার।

নিউ ব্যারাকপুরে রেল লাইনের পাশে বাড়ি দেবাশিসের। দুর্ঘটনা তাঁকে প্রতিবন্ধীর তকমা দিয়েছে বটে, কিন্তু কারোর সাহায্যের ভরসা বা মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে রাজি নন তিনি। দিন গুজরান করতে বাড়ির বাইরে বসে ফুল বিক্রি করেই নিজের দিন গুজরান করেন দেবাশিস। দু’হাতের উপর ভর করে ট্রেনে চেপে প্রতিদিন ঠাকুরনগর যান তিনি। সেখান থেকে ফুল কিনে এনে বিক্রি করেন। এভাবেই পাঁচ বছর ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা। প্রতিবন্ধকতা তাঁকে আটকাতে পারে নি।

জন্ম থেকে বিশেষভাবে সক্ষম নন দেবাশিস। বছর পাঁচেক আগেও আর সবার মতোই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেন তিনি। দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। কিন্তু মানসিক অবসাদের জেরে ক্রমেই অন্ধকারে তলিয়ে যেতে থাকেন তিনি। তারপর নেন সেই চরম সিদ্ধান্ত। ট্রেন লাইনে দাঁড়িয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন দেবাশিস।

ট্রেনের ধাক্কায় সবটা অন্ধকার হয়ে যায়। যখন দেবাশিসের জ্ঞান ফেরে, তখন তিনি হাসপাতালের বেডে শুয়ে। থিতু হতেই বোঝেন কোমরের নীচ থেকে যেন কিছু নেই তাঁর। জানতে পারেন, ট্রেনের ধাক্কায় কোমরের নীচের অংশ বাদ পড়েছে তাঁর। তারপর থেকেই জীবন সংগ্রামের নতুন অধ্যায় শুরু দেবাশিসের। একটা ছোট্ট কাঠের বাক্সই তাঁর দোকান। কেউ যদি সেখান থেকে জোর করে ফুল তুলে নিয়ে চলেও যায়, তাহলেও কিছু করার ক্ষমতা নেই দেবাশিসের।

তাঁর সেই দুর্ঘটনার পর অনেকেই সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেবাশিসকে। কিন্তু বাস্তবে তা আর হয়নি। দেবাশিস জনান, কোনও আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন নেই তাঁর। চলাফেরার জন্য বিশেষ তিনচাকা গাড়ি আর দোকানের পাকাপাকি বন্দোবস্ত হলেও বাকি ব্যবস্থা সে করে নেবে।

দেবাশিস বলেন, “পাঁচ বছর আগে দুর্ঘটনার কারণে এই অবস্থা। মানসিক অবসাদের কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা করি। কিন্তু বেঁচে গিয়েছিলাম। পাঁচ বছর ধরে ফুলের ব্যবসা করছি। ফুলের প্রতি আমার ভালোবাসা রয়েছে। সেই কারণে এই ব্যবসা শুরু করি। ট্রেনে করেই ঠাকুরনগরে গিয়ে ফুল নিয়ে আসি। আমি শুধু চাই, আমার একটা তিনচাকা গাড়ি বন্দোবস্ত করে দেওয়া হোক। এর থেকে বেশি কিছু আমার কোনও দাবী নেই”।

Back to top button
%d bloggers like this: