রাজ্য

একুশের নির্বাচনে প্রশান্ত কিশোর কি ঘাসফুলের কাঁটা নাকি স্বস্তির কারণ? জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা

প্রশান্ত কিশোর; নামটা কারোর কাছে মাথাব্যথার কারণ আবার তার কৌশলী মস্তিষ্ক তৃণমূলের অহঙ্কারও বটে। দু’বছর আগে লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের তৃণমূলের পতনের আভাস পেতেই তড়িঘড়ি তাকে নিজেদের সাংগঠনিক পরামর্শদাতা করে নিয়ে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পিকে এবং তার সংস্থা আই প্যাক এসে তৃণমূলের কতটা ভালো হয়েছে তা বোঝা যাবে এই বছরের বিধানসভা নির্বাচনে। কিন্তু যেভাবে একের পর এক তৃণমূলের রথী-মহারথীরা চলে যাচ্ছেন গেরুয়া শিবিরে তাতে পিকের যোগ্যতা নিয়ে উঠে গিয়েছে বড়োসড়ো প্রশ্ন।

সমস্যা আসলে অন্য জায়গায়। প্রশান্ত কিশোর তৃণমূলকে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রতীক বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা লাগাতার করে যাচ্ছেন এবং তার জন্য তৃণমূলের নেতাদের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে তার সংস্থার কর্মীরা। এতেই বিপাকে পড়ে গিয়েছেন তৃণমূলের বেশকিছু দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা নেত্রীরা। এবার তৃণমূলের বর্ষীয়ান সদস্যদের অভিযোগ যে সংগঠনে অতিরিক্ত নাক গলাচ্ছেন প্রশান্ত কিশোর। হঠাৎ করে উড়ে এসে জুড়ে বসা একজন বহিরাগতর এরকম ছড়ি ঘোরানো কোনোভাবেই মেনে নিতে রাজি নন ঘাসফুল শিবিরের প্রবীণ সদস্যরা।

আরও পড়ুন – ঘাসফুলে পড়ছে কোপ, সুজিত বসুও এবার বিজেপিতে?

এমনিতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে নিজের রাজনৈতিক উত্থান ঘটিয়েছেন পিসির হাত ধরে তাতে দলের ভেতরে অসন্তুষ্ট অনেকে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এখন রাজ্য প্রশাসন চালান। তৃণমূল সুপ্রিমো হিসেবে তিনি তাঁর দায়িত্ব পুরোদমে এখন পালন করতে পারেন না তাই দল চালাবার তিনি বকলমে অভিষেককে দিয়েছিলেন। এর জন্য স্বজনপোষণের অভিযোগও উঠেছে। যদিও তাতে অভিষেকের কিছু যায় আসে নি। তিনি প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে শুরু করেছিলেন। যার নিট ফল হল দল থেকে একের পর এক পোড়খাওয়া মাথা সরে যাওয়া অথবা সরিয়ে দেওয়া কারণ প্রশান্ত কিশোরের টিমের তৈরি রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে তৃণমূলের সাম্প্রতিক সাংগঠনিক রদবদল করা হয়েছে।

আরও পড়ুন – মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী পেয়ে গেল বিজেপি! শোরগোল রাজ্য রাজনীতিতে

সেখানেই হয়েছে গন্ডগোল কারণ দেখা যাচ্ছে যে প্রশান্ত কিশোরের টিমের রিপোর্টে গুরুত্ব পেয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিতিবিরক্ত হয়ে দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী, মিহির গোস্বামী, শীলভদ্র দত্ত, জটু লাহিড়ীদের মতো অনেকেই।

আরও পড়ুন – বিজেপি ক্ষমতায় এলে কে হবেন রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী? জানিয়ে দিলেন অমিত শাহ

তরুণ প্রজন্ম অর্থাৎ যুব তৃণমূলকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে দলের পুরোনো মাথাদের ক্ষিপ্ত করে তুলছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশান্ত কিশোর। এর ফল এই বছর নির্বাচনে পড়বে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

একটা ভোট দিতে গেলে জেলা সংগঠনের উপর জোর দিতে হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজে জিতেছিলেন জেলা ভোটের উপর ভিত্তি করেই।মূলত গ্রামের মানুষরাই মমতাকে বেছে নিয়েছিলেন। শহর কিন্তু তৃণমূল থেকে মুখ ফিরিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে প্রশান্ত কিশোরের টিম জেলাকে সম্পূর্ণ অবহেলা করে শহরের যুব তৃণমূল দলকে প্রাধান্য দিচ্ছে। যারা নিজেদের বুথেই জিততে পারবেন না তাদেরকে গুরু দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে তৃণমূলের এইবারের ভরাডুবির পেছনে বড়োসড়ো হাত থাকবে প্রশান্ত কিশোরের এই কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

Back to top button
%d