একসঙ্গে ডুব দিয়েছে সব রাঁধুনি, দিদিমণিরাই হাত লাগিয়ে রেঁধে ফেললেন মিড ডে মিল, চেটেপুটে খেল পড়ুয়ারা

পাঁচজন রাঁধুনি একসঙ্গে কামাই। কিন্তু তা বলে কী আর মিড ডে মিল বন্ধ রাখা যায়! সেই কারণে স্কুলের সব শিক্ষিকারা মিলেই হাতে হাত লাগিয়ে সেরে ফেললেন রান্না। আর দিদিমণিদের রান্না করা সেই ভাত, ডাল, পাঁচমেশালি তরকারি চেটেপুটে উপভোগ করল পড়ুয়ারাও।
ঘটনাটি ঘটেছে ভদ্রেশ্বরের ধর্মতলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। সেই স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় ৬০০। তাদের মধ্যে মিড ডে মিল পায় আড়াইশো জন পড়ুয়া। মিড ডে রাঁধার জন্য পাঁচজন রাঁধুনি রয়েছেন। গতকাল, বৃহস্পতিবার একজন রাঁধুনি ছুটি নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষমেশ দেখা যায় বাকি চারজন না বলেই ডুব মেরেছেন। এদিকে রান্নার জন্য বাজার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রান্নাটা কে করবে?
সেই সময়ই কালবিলম্ব না করে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সুমনা সমাদ্দার ও বাকি শিক্ষিকারা স্থির করে ফেলেন যে পড়ুয়াদের অভুক্ত রাখা চলবে না। সকলে মিলে জোগাড় শুরু করে দেন রান্নার। সবজি ধুয়ে কেটে গ্যাস জ্বালিয়ে চাপিয়ে দিলেন রান্না। সময়মতো রান্না শেষ করে পড়ুয়াদের পাতে বেড়ে দিলেন ভাত, ডাল পাঁচমেশালি সবজি।
ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সুমনা সমাদ্দার জানান, তাঁর স্কুলে শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মী সব মিলিয়ে মোট ৩৮ জন রয়েছেন। প্রতিদিনই মিড ডে মিলে ভালো খাবার দেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। তিনি বলেন, “রাঁধুনিরা রান্না করলেও শিক্ষিকারা পালা করে নজরদারি চালান। অনেক সময় দেখা গেছে ঠিকমতো না ধুয়েই রান্নার তোড়জোড় করছেন রাঁধুনিরা। বাচ্চাদের খাবারের ক্ষেত্রে কোনও সমঝোতা করা হয় না বলেই এ সমস্ত ব্যাপারে সজাগ থাকেন শিক্ষিকারা। এ সব বলাতেই রাঁধুনিরা জব্দ করতে এক সঙ্গে এ দিন স্কুলে আসেননি। তাতে মিডডে মিল যাতে বন্ধ না থাকে তার জন্য নিজেরাই রান্না করে পড়ুয়াদের খেতে দেন”।
অন্যদিকে, এই বিষয়ে চাঁপদানি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৌসুমী মণ্ডল বলেন, “মিডডে মিল রাঁধুনিদের নিয়ে কোনও সমস্যা হয়েছে বলে আমাকে জানিয়েছেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষিকা। আজ সব রাঁধুনি একসঙ্গে আসেননি। সমস্যাটা এক তরফা নাকি দু দিকেরই সেটা দেখতে কাল উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। স্কুলে মিডডে মিল বন্ধ রাখা যাবে না”।
তবে যাই হোক না কেন, স্কুল শিক্ষিকাদের হাতে রান্না খেয়ে যারপরনাই খুশি পড়ুয়ারা। তাদের কাছে স্কুল শিক্ষিকারা বরাবরই কড়া। কিন্তু এদিন তাদের হাতের রান্না বেশ তৃপ্তি করে খেল পড়ুয়ারা। এদিনের রান্না স্বাদও যেন অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু বেশিই ভালো হয়েছিল।