“আমি তো কোনও দোষ করিনি, তাহলে আমি কেন মুখ ঢাকব?” বলছেন অ্যাসিড আক্রান্ত মনীষা পৈলান
মনীষা পৈলান, নামটার সঙ্গে পরিচিত প্রায় সকলেই। নামের পাশে জ্বলজ্বল করে লেখা থাকে ‘অ্যাসিড আক্রান্ত’ কথাটা। আর এখানেই চরম আপত্তি মনীষার। ২০১৫ থেকে এই পরিচিতি বয়ে চলেছেন জয়নগরের তরুণী মনীষা পৈলান।
২০১৫ সালের ১৭ই নভেম্বর। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার জয়নগরের হাসানপুরে নিজের বাড়ির সামনেই তরুণী মনীষার মুখে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারে সেলিম হালদার সহ পাড়ারই আরও পাঁচ যুবক। মনীষার দোষ? সেলিমের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়া। আর সেই কারণেই পুরুষতান্ত্রিক প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলতে থাকা সেলিম অ্যাসিড ছোঁড়ে মনীষার মুখে। সঙ্গে সঙ্গে ঝলসে যায় মনীষার মুখ চোখ। আর সেই মুহূর্তে মনীষার নামের পাশে তকমা জুড়ে যায় “অ্যাসিড আক্রান্ত”। টানা ৪২ দিনের চিকিৎসার পরে অবশেষে সুস্থ হয়ে ওঠেন মনীষা। কিন্তু চিরতরে হারিয়ে ফেলেন দুটো জিনিস, এক হল তাঁর নিজের চেহারা আর, নিজের বাঁ চোখ।
আর এই নতুন চেহারায় তাঁকে দেখে মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু বান্ধবদের অনেকেই সরে গেছেন জীবন থেকে। কিন্তু এত কিছুও মনীষার অদম্য জেদের কাছে হার স্বীকার করেছে। প্রথম প্রথম মুখ ঢাকলেও তারপর মনীষা উপলব্ধি করেন তাঁর মুখে এই অ্যাসিডের দাগ, এটা তো তাঁর দোষে নয়। এটা সমাজের দোষ, সমাজের বিকৃত পুরুষতান্ত্রিক ইগো। সুতরাং লজ্জা পেলে তারা পাবে, মুখ ঢাকলে তারা ঢাকবে।
পড়াশোনার পাশাপাশি একটি ক্যাফেতেও কাজ করেন মনীষা। এলাকার প্রথম গ্র্যাজুয়েট মনীষার বাঁচার অদম্য ইচ্ছা, অদম্য প্রাণশক্তি উদ্বুদ্ধ করে সমাজের নানাস্তরের মানুষকে। মনীষার বক্তব্য জীবনে কাজটাই আসল। বাহ্যিক চেহারা বা রূপ সেখানে নগন্য। কেউ যদি নিজের কাজ সঠিকভাবে করে, তখন সেই কাজটাই তাঁকে পরিচিতি দেবে। রূপটা নয়।
(সবার আগে সব খবর, সঠিক খবর জানতে ফলো করুন আমাদের Google News, Whatsapp, Facebook, X Handle (Twitter), Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)